ডেস্ক নিউজ : ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী ‘রেলমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রীকে জরিমানা করা সেই ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বহিষ্কারাদেশে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আজ রোববার (৮ মে) দুপুরে রেল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নিজেই এ তথ্য জানান।
ওই ঘটনায় পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে ৩০৯টি বাস্তুহারা পরিবারকে ঠিকানা দিলেন শেখ হাসিনা
সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ তো সেভাবেই দেখবে। এখানে যদি দেখা যায় আমার স্ত্রী কোনো দোষ করে থাকে… ইয়ে করে থাকে… আমার কোনো ইনভলভমেন্ট এখানে ছিল না।
বলা হচ্ছে যে মন্ত্রীর কারণে এমনটা ঘটছে। আমার যদি কিছু করার থাকত তাহলে তো সরাসরিই করতে পারতাম; কারও সাহায্যের তো দরকার হবে না। মেসেজটা যেভাবে গেছে সেটা সঠিক না।’
টিটিই শফিকুল ইসলাম সেদিন তার দায়িত্বই সঠিকভাবে পালন করেছেন বলে জানান রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘টিটিইর কাজ হলো রেলে শৃঙ্খলা আনা।
তার কাজই তো রেলে যাত্রীদের সহযোগিতা করা, তাকে সাহায্য করা, সঠিক জায়গায় সেবা দেওয়া; রেলের লোকদের দায়িত্বই সেটা। এখন যেভাবে ঘটেছে ঘটনাটি, তাতে আমরা বিব্রত।’
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, শফিকুল ইসলামকে পদোন্নতি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হতে পারে; তাকে পুরস্কৃত করার কথাও ভাববে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এদিকে, আজ দুপুর ১২টায় ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে এক সংবাদ সম্মেলনে শফিকুলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম।
তবে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়দানকারী তিন ব্যক্তিকে জরিমানার ঘটনার তদন্ত চলবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ, গত ৪ মে দিবাগত রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে জরিমানার এ ঘটনা ঘটে।
পরে বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে ওই টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্ত হওয়া শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত।
আরো পড়ুন – সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু সেলিম পাননি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের অনুদান
মূল ঘটনা –
সূত্র জানায়, গত ৪ মে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ওঠেন প্রান্ত, ওমর ও হাসান নামের তিন যাত্রী; এ সময় কর্তব্যরত টিটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে বসা ওই যাত্রীদের টিকেট দেখতে চান।
ভাড়া নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই তিন যাত্রী নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন।
টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠান। ওই তিন যাত্রী শোভন কামরাতেই ঢাকা পৌঁছান।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইল ফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে গতকাল শনিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
গণমাধ্যমকে দেয়া রেল মন্ত্রীর বক্তব্য –
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়, তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
আরো পড়ুন – প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার থেকে বঞ্চিত টাঙ্গাইলের অধিকাংশ গণমাধ্যম কর্মী
মন্ত্রীর (আমার) নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
এদিকে, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়দানকারী তিন ব্যক্তিকে জরিমানার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জরিমানার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানোরও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র – আমাদের সময়, সম্পাদনা – অলক কুমার
আরো পড়ুন – রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ের পরও টিকিট করায় টিটিই বরখাস্ত