বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতীক এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পরিচিত ছিলেন আপসহীন নেত্রী হিসেবে। দল-মত নির্বিশেষে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থার এক অনন্য নাম। ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়েই এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক হয়ে ওঠেন তিনি।
দেশ, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশত্যাগে চাপ থাকলেও তিনি দেশ ছাড়েননি। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন মামলার কারণে টানা সাত বছর কারাবন্দি থাকলেও তার দৃঢ়তা কখনো নড়েনি।
১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮২ সালে দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দিয়ে দ্রুতই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৪ সালে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৩, ২০০৯ এবং ২০১৬ সালের কাউন্সিলে পুনরায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।
এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে ‘এরশাদ হটাও’ আন্দোলন ব্যাপক গতি পায়, যা শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ের দিকে নিয়ে যায়। প্রথমবার ১৯৯১ সালে, দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে এবং তৃতীয়বার ২০০১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সার্কের চেয়ারপারসন হিসেবে তিনি দু’বার দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনী ইতিহাসে পাঁচটি নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতে জয়ী হওয়ার রেকর্ড তার দখলে।
ওয়ান ইলেভেনের সময় ২০০৭ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দীর্ঘ কারাবাসের পর তিনি জামিন পান। ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদসহ নানা রাজনৈতিক প্রতিকূলতাও মোকাবিলা করেছেন তিনি। গত ১৫ বছরে অসংখ্য মামলার সম্মুখীন হলেও খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে কখনো সরে যাননি।
তার পুরো রাজনৈতিক পথচলা দৃঢ়তা, সংগ্রাম এবং আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে আছে। তাই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘হার না মানা সংগ্রামের নাম’ হিসেবে পরিচিত।











