মির্জাপুর বহুরিয়া ইউনিয়নে বহুরিয়া গ্রামের দু ফসলি আবাদি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, এতে অসহায় হয়ে পড়ছেন শতশত কৃষক, দরিদ্র কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে একখন্ড জমি কিনতে পারলেই হলো। ২০-২৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যায় ইট ভাটায়। এরপর আশে পাশের জমি ভেঙে পড়ে ঐ গর্তে। তখন এমনিতে মাটি খেকোদের কাছে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে পড়ে সাধারণ নিরীহ কৃষক।
সরেজমিনে, বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার কোট বহুরিয়া, মন্দিরাপাড়া, মীর দেওহাটা এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা মিলেছে।
উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের মীর দেওহাটা গ্রামের ইটভাটার মালিক মো. ফজল মিয়া, ফরিদ মিয়া, মো. সহিদ, মোতালেব মিয়া, আকবর মিয়া, আসাদসহ গংরা এই আবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির সাথে যুক্ত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও ভেক্যু চালকরা।
উপজেলার কোট বহুরিয়া, মীর দেওহাটা মন্দিরাপাড়া এলাকায় রয়েছে ২২টি ইটভাটা। আর এই সকল ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে একশ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ী জোর করে বা প্রলোভন দেখিয়ে আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে। এভাবে মাটি কাটার ফলে নদীর উপর তিনটি বাধঁ দিয়ে সড়ক, কৃষক ও ফসলের ক্ষতিসাধনসহ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। আর মাটি কাটার এই মহাযজ্ঞের নেতৃত্বে রয়েছে কমপক্ষে ৫টি প্রভাবশালী মহল।
১০ থেকে ১২টি ভেক্যু মেশিন দিয়ে প্রায় ৪০-৫০টি ড্রামট্রাকযোগে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে। ভেক্যু চালকদের দেয়া তথ্য মতে প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ ট্রাক বা প্রায় ছয় লাখ ঘনফুট মাটি কাটা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, কেউ কেউ স্বেচ্ছায় মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের জমি বিক্রি করলেও অনেকে বাধ্য ও জিম্মিদশায় জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। জমি বিক্রি না করলে এমনভাবে মাটি কেটে নেওয়া হয় যে বিক্রয়ে অনিচ্ছুক ব্যক্তির জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে কমমূল্যে আবাদি জমি বিক্রি করে দেয় স্থানীয় কৃষকরা।

স্থানীয় ভুক্তভোগী মুসা মিয়া জানান, বাবা ইটভাটার মালিক সহিদ আমার ক্ষেতের পাশে ভেকু বসিয়ে ২০ ফুট গভীর করছে, তাহলে আমার খেতের মাটি সামান্য বৃষ্টিতেই ভেঙে পড়বে।
বহুরিয়া গ্রামের সুলতান মিয়া জানান, আমার ক্ষেতের অনেক মাটিই কেটে নিয়েছে, আমি নিজে এসে বাঁধা না দিলে আরও অনেক মাটি কেটে ফেলতো, কিছু বলতে গেলে মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়।
মন্দিরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক মেম্বার ডা. ইন্তাজ আলী অভিযোগ করে বলেন, মাটি ব্যবসায়ীরা তার জমির পাশের জমি ক্রয় করে ১০-১৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ার সময় তার জমিও কেটে নিচ্ছে। এনিয়ে দুই বার তাদের বাঁধা দিলেও তারা মানছে না। এলাকার কৃষি জমি রক্ষার স্বার্থে প্রশাসনের কাছে অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে এই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন জমির মালিক জানান, প্রতি বছরই এভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। এতে করে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। জমি উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে।
মাটি ব্যবসায়ী আকবর ও ইটভাটা মালিক ফরিদ মিয়ার সাথে কথা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে সংবাদ না করে মিমাংসা করার প্রস্তাব দেন।
এ বিষয়ে মেসার্স সহিদ ব্রিকস্ ইটভাটার মালিক মো. সহিদের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কারও জায়গায় মাটি কাটি নাই, নিজের জমি থেকে মাটি কাটছি। তিনি আরও বলেন, আমার মাটি আমি কাটবো, এসিল্যান্ডকে জানাতে হবে কেন, আইনের অনুমতি লাগবে কেন?
 
			 
    	 
		     
                                 
                                




 
							




