কালিহাতীতে পরকিয়ার টানে সহমরণ নিয়ে রহস্য, পরিবারের দাবি হত্যা

বিশেষ সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সকালে উপজেলার বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের রাজাফৈর পল্টনপাড়া এলাকায় গোয়াল ঘর থেকে একই রশিতে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এসময় তাদের কোমর ওড়না দিয়ে বাঁধা ছিলো। এটা “আত্মহত্যা নাকি হত্যা” এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য।

নিহতরা হলেন- একই গ্রামের আব্দুল বাছেদের ছেলে শাহজাহান (৪০) ও দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে এবং একই এলাকার দানেজ আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩৫)

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার রাজাফৈর পল্টনপাড়া এলাকার বিবাহিত শাহজাহান মিয়ার সাথে একই এলাকার গৃহবধূ আলেয়া বেগমের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এক পর্যায়ে তারা প্রায় দেড় মাস আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

এরপর গত বৃহস্পতিবার শাহজাহান ওই নারীকে নিয়ে তার বাড়ি ফিরে আসে।

পরে শুক্রবার সকালে আলেয়া বেগমের পূর্ব স্বামী দানেজ আলীর গোয়াল ঘর থেকে আলেয়া ও শাহজাহানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

মৃতদের পরিবারের বক্তব্য –

নিহত আলেয়া বেগমের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, প্রায় দেড় মাস আগে তারা দুজনে পালিয়ে যায়।

শুনেছি তারা ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে কোর্ট ম্যারেজও করছিলো।

পরে বুধবার (১৪ অক্টোবর) আলেয়াকে নিয়ে শাহজাহান তার বাড়িতে উঠে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ও সন্ধ্যা রাতে শাহজাহানের প্রথম স্ত্রী জেসমিনসহ ভাই-বৌ হাজেরা ও রহিমা, ভাইপো জাহিদ, ভাতিজা বউ ঝর্ণা, ভাতিজি মীম, ভাইয়ের জেইঠাস (স্ত্রীর বড় বোন) ইয়ারজানের মেয়ে অজ্ঞাতসহ কয়েকজন শাহজাহান ও আলেয়াকে মারধর করে।

পরে সকালে তাদের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়, দুজনের কোমড় ওড়না দিয়ে বাধাঁ ছিল, তাদের পা ছিল মাটিতে।

“এটা আত্মহত্যা হতে পারে না।”

নিহত আলেয়া বেগমের মা সোনাভানু বিলাপ করতে করতে বলেন, ফাঁসি লইয়া মরলে পেসাব-পায়খানা করে, জিহ্বা বা বীর্য বের হয় এ রহম কিছুই আছালনা।

মারপিটেই মারা গেছে বা মাইর‌্যা ঝুলাইয়া থুইছে, আইনের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।

নিহত শাহজাহানের মা শাহীনা বেগম বলেন, আমার ছেলে শাহজাহানের সঙ্গে আলেয়ার সম্পর্ক ছিল।

তারা বাড়িতে ফিরে এলে শাহজাহানের প্রথম স্ত্রী জেসমিন তার বাবার বাড়ির লোকজনকে নিয়ে তাদের মারধর করে।

পরে সকালে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

শাহজাহানের প্রথম স্ত্রী জেসমিনের বাবার বাড়িতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভাতিজী মীম ও ভাতিজা বউ ঝর্ণা কাউকেই পাওয়া যায়নি।

যারা ছিল তারাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।

তবে রান্না ঘরের সামনে বেতের একটি মোটা লাঠি দেখতে পাওয়া যায়।

বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছোহরাব আলী বলেন, বিষয়টি রহস্যজনক।

তাদের পা মাটিতে ঠেকানো ছিল ও রক্তও পড়েছিলো। বিষয়টি নিয়ে সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

কালিহাতী থানার ওসি সওগাতুল আলম এ বিষয়ে বলেন, দুজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া বিভাগের এডিশনাল এসপি মো. শাহিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে এটি প্রকৃত আত্মহত্যা না অন্য কোনও কারণে মৃত্যু।

তখন আমরা ওই এঙ্গেলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সম্পাদনা : অলক কুমার