বিশেষ প্রতিবেদক : পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গায় শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার এলেঙ্গা লুৎফর রহমান মতিন মহিলা ডিগ্রি কলেজের পাশে ফাঁকা জায়গা থেকে ককটেলসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।
যা নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রচারিত হয়।
কিন্তু তাদের আটক করা হয়, আগের দিন বৃহস্পতিবার। পরে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক আইনে মামলা করেছে।
এই মামলাটি পুলিশ ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৩০/৪০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
যাদের আটক করা হয়েছে, তারা সবাই বিএনপি নেতা-কর্মী বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কালিহাতী শাখার সহ-সভাপতি।
এসময় তিনি ঘটনাটিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো বলেও অভিযোগ করেন।
মামলার অভিযোগে যা বলা হয় –
১৭ নভেম্বর রাতে কালিহাতী থানা পুলিশের একটি ভ্রাম্যমাণ টহল উপজেলার ভাগুটিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলো।
এসময় তারা খবর পায় এলেঙ্গা লুৎফর রহমান মতিন মহিলা কলেজের পাশে বসে নাশকতার উদ্দেশ্যে কিছু লোক সভা করছে।
এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা একটি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে দৌঁঁড়ে পালিয়ে যায়।
এসময় সেখান থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। এছাড়াও ১১টি ককটেল ও একটি বিষ্ফোরিত ককটেল সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।
ওই রাতেই কলিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমিন বাদী হয়ে আটককৃত পাঁচজনসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে কালিহাতী থানায় বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
আসামীদের বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক দ্রব্য দিয়ে জীবন বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিষ্ফোরণ ঘটানো এবং সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজন হলেন –
উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ও দশকিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সস্পাদক এসএম আহসান হাবিব ওরফে লাভলু, কালিহাতী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক ইকবাল হোসেন, পারকি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক শহিদ সিকদার, নাগবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সাইদুল ইসলাম ও গোহালিয়া বাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য হাফিজুর রহমান।
এদের শুক্রবার আদালতে হাজির করে পুলিশ জিঞ্জাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে।
আদালত কারাগার ফটকে দুই দিনের জিঞ্জাসাবাদের আদেশ দেন।
মামলায় অন্য আসামীরা হলেন –
উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম ওরফে শোভা, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ও সল্লা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন, মজনু মিয়া, জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক ও সহদেবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান ওরফে বালা, সাংগঠনিক সম্পাদক আতোয়ার রহমান, সদস্য ও এলেঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র সাফী খান, সহ-সম্পাদক জসিম খান, সদস্য আতিয়ার রহামন, পৌর বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ওয়াদুদ, বল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু তালহাদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও সহদেবপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদ, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও নারান্দিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহর আলী, বাংড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুলতান গিয়াস, বিএনপি কর্মী শাহিনুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন মোল্লা, যুগ্ম-আহবায়ক হাসমত আলী, মিথুন মিয়া, যুগ্ম-আহবায়ক ও কোকডহড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, যুবদলের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক বেলায়েত হোসেন।
বিএনপি নেতাদের বক্তব্য –
এই মামলার আসামী ও উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজনু মিয়া জানান, সেদিন এলেঙ্গাতে ককটেল বিষ্ফোরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য এই কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পাঁজনকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলা দায়েরের পর দলের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছে; অনেকে এলাকা ছেড়েছেন।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন- রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতেই উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবেই ভূয়া ও গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তারা আরো বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে বাঁধাগ্রস্ত করতেই নেতাকর্মীদেরকে বানোয়াট মামলায় আটকে রাখতে সরকার বেপরোয়া হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য –
বিএনপির নেতাদের এ অভিযোগের বিষয়ে মামলার বাদী কালিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক আল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা আজিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। সম্পাদনা – অলক কুমার