অলক কুমার : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
আর এই প্রতিযোগিতায় সর্বহারা হচ্ছে উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত নদী, খাল, বিল পাড়ের ভুখা-নাঙ্গা মানুষ।
অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী, খাল, বিল পাড়ের মানুষদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হচ্ছে; ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।
এই প্রতিযোগিতায় যারা লাভবান হচ্ছে তাদের সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠে না। উপরন্তু প্রতিবাদ করলে রোষানলে পড়তে হয়; হতে হয় প্রভাবশালী নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের মামলা হামলার শিকার।
তবুও থেমে নেই প্রতিবাদ; কারণ এদের অনেকেরই সর্বশান্ত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।
প্রতিদিনই অবৈধ বাংলা ড্রেজার বন্ধে কোথাও না কোথাও হচ্ছে প্রতিবাদ, হচ্ছে মানববন্ধন।
তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৪ মার্চ) উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চামুরিয়া গ্রামে অবৈধ বাংলা ড্রেজার বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেছেন এলাকাবাসী।
সোমবার সকালে চামুরিয়া বিলের পাশে শতাধিক কৃষক এ বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিকট প্রতিকার চেয়ে তিন’শ সাধারণ মানুষের গণস্বাক্ষরসহ অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসী।
ভূক্তভোগীদের কথা –
ভূক্তভোগীরা জানায়, এই এলাকার রাঙাইদ দহে অবৈধ বাংলা ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বালু ও উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালী একটি মহল।
তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। বালু উত্তোলন বন্ধের কথা বললে প্রভাবশালীরা মামলা-হামলার ভয় দেখায়।
তারা আরো বলেন, আমরা ভুখা-নাঙ্গ, আমাদের কোন শক্তি নাই, আমাদের ভোটের দরকার নাই, তাই আমাদের কথা শোনারও কেউ নাই।
চামুরিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী মোকদম মোল্লার ছেলে করিম মোল্লা, হাবু মিয়ার ছেলে তোতা মিয়া, মৃত আবেদ আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ, মোস্তাব আলীর ছেলে বেলায়েতসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে জোর করে মাটি কাটছে।
ফলে আমাদের গ্রামের ২টি ঈদগাহ মাঠ দুইটি কবরস্থান, একটি ব্রীজ একটি মসজিদসহ শত শত বাড়ীঘর হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা বাঁধা দিতে গেলে মামলার ভয় দেখিয়ে হুমকি দেয়।
স্থানীয় ভ্যান চালক কাদের বলেন, এরা প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে চলে এবং এদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখেনা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথা –
সহদেবপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও মাটি ব্যবসায়ী মো. লাল মিয়া জানান, এলাকায় সরকারি দুইটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্বার্থে মাটির প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি আরো বলেন, সরকারি কাজে সরকারি জায়গার মাটি কাটছি। এতে সাধারণ মানুষের কি?
সহদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোখলেছুর রহমান ফরিদ মুঠোফোনে জানান বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি দেখবো।
কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাহী নাজমুল হুসেইন জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাছাড়াও আমি আসার পর কালিহাতীতে বাংলা ড্রেজার বন্ধে কাজ করছি। বাংলা ড্রেজার বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সাংসদ হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, আমি গতকাল ওমরা হজ্ব ব্রত শেষ করে দেশে ফিরেছি। আগামি দিন এলাকায় গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।