ঘাটাইল সংবাদদাতা : ঘাটাইলে পাহাড়ি জমির শ্রেণি পরিবর্তনের মহোৎসব চলছে। কেউ পুকুর খনন করছে, কেউবা বাড়ি তৈরি করছে। আর এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে উপজেলার ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে।
ভূমি আইন উপেক্ষা করে অবাধে পুকুর খনন করায় দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ।
অন্যদিকে ইটভাটার চাহিদা মেটাতে দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ফসলি জমির টপসয়েল। মাটিবহনকারী ট্রাক্টরের অবাধ চলাচলে নষ্ট হচ্ছে প্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা।
জানা গেছে, উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের সরিষা আটা, সরাতৈল, নাউদারা, চাপড়া আটাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খননের হিড়িক পড়ে গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়।
অন্যদিকে সাগরদিঘী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বনবিভাগ এবং সরকারি সম্পত্তির মাটি কেটেও বিক্রি করেছেন এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যক্তি।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানায় –
ঘাটাইল উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ২৭ হাজার ৮৫১ হেক্টর। এর মধ্যে তিন ফসলি জমি ১৭ হাজার ২১৮ হেক্টর, দুই ফসলি ৮ হাজার ১৮৫ হেক্টর ও এক ফসলি জমির পরিমাণ ২ হাজার ৩১১ হেক্টর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমি আইন উপেক্ষা করে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে।
অনেকে আবার বাগানের জমির মাটি কেটে সেখানে পুকুর খনন করছেন। এছাড়া আইনের তোয়াক্কা না করেই ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি।
কথা হয় ধলাপাড়া ইউনিয়নের সরিষা আটা গ্রামের ভেকু সিন্ডিকেটের অন্যতম ঠিকাদার আকবর মিয়ার সাথে।
তিনি বলেন, “দেশের আইন কে মানে? সব জায়গায় অনিয়ম আছে। আর আমি তো একা না, আমার মতো অনেকেই আছে”।
ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজস করে মাটি ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত নির্বিগ্নে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কোনো কোনো এলাকায় এস্কেভেটর (ভেকুমেশিন); আবার কোনো এলাকায় শ্রমিক লাগিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এসব মাটি খননে কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। জমির মালিককে অর্থের লোভ দেখিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টপসয়েল।
প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চুটিয়ে চলছে খনন কাজ। এতে করে দিনদিন কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। এভাবে চলতে থাকলে আগামিতে শস্যভান্ডারের উপাধি হারাবে উপজেলার এই পাহাড়ি এলাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, শিল্প কলকারখানা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন কারণে দেশে প্রতিবছর এমনিতেই ফসলি জমি কমে যাচ্ছে।
এছাড়া ফসলি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি পরিমাণ মাটিতে জৈব পদার্থ থাকায় একে টপসয়েল বলা হয়ে থাকে।
জমির এই অংশ কোনোভাবেই কেটে নেওয়া উচিত নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন কুমার সরকার লাল মাটি কাটার সাথে সম্পৃক্তদেরকে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।