নিজস্ব প্রতিবেদক: পৌরসভার আবাসন আইন অমান্য করে চলাচলের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।
এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ওই এলাকায় বসবাসরত পাঁচটি পরিবার। স্থানীয় মাতাব্বরদের মধ্যস্থতায় এর নিস্পত্তি না হওয়ায় সমস্যা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী ওই পরিবারগুলো।
প্রায় দুই বছর ধরে এমন অমানবিকতার শিকার হচ্ছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের কচুয়াডাঙা প্রাইমারী স্কুলের সামনে বসবাসরত পাঁচ পরিবার।
সমস্যা সমাধানে দফায় দফায় স্থানীয়ভাবে বৈঠক হলেও এর স্থায়ী কোন সুরাহা পায়নি পরিবারগুলো।
পরিবারগুলোর চলাচলের জন্য দুই ফুট রাস্তা ছাড়ার সিদ্ধান্ত দেন বৈঠকের স্থানীয় মাতাব্বররা।
মাতাব্বরদের রাস্তা ছাড়ার সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই দেয়াল নিমার্ণ করেছেন ওই প্রতিবেশী বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
এলাকাবাসীর বক্তব্য
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী কতিপয় মাতাব্বরের ইন্দনে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
আবাসন আইনে প্রতিবেশীদের চলাচলের জন্য রাস্তা ছাড়ার বিধান থাকলেও ওই মাতাব্বরদের প্ররোচনায় সে আইনের তোয়াক্কা করছেন না জমি ক্রেতারা।
রাস্তা না থাকায় অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে পরিবারগুলোর চলাচল করতে হচ্ছে যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
স্থানীয় ও নীরিহ হওয়ায় এ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মিজানুর রহমান, আব্দুল্লাহ্, শাহাদত, শাওন ও মনিদের পরিবার। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দাবি করেছেন তারা।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন, ইতোপূর্বে এই স্থান দিয়ে চলাচলের রাস্তা ছিল।
দুইজন ওই স্থানের ৮ শতাংশ জমি কিনে চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় মাতাব্বররা দুই ফুট রাস্তা ছাড়ার জন্য বললেও এ জমি ক্রেতা সেই সিদ্ধান্ত না মেনেই দেয়াল নির্মাণ করেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা চর থেকে এসে এখানে বাড়ি করেছি বলে এমন অত্যাচারের শিকার হচ্ছি।
রাস্তা না থাকার কারণে মানুষের বাড়ির উপর দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে নানা ধরণের সমস্যায় রয়েছি আমরা।
বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকে অবগত করা হলেও এর কোন সুরাহা পায়নি।
আব্দুল্লাহ্ বলেন, অতীতে জমিগুলো ফাঁকা ছিল। এ কারণে চলাচলের কোন সমস্যা হত না।
সম্প্রতি জমিটুকু বিক্রি হওয়াসহ সেই জমিতে দেয়াল নির্মাণ করার কারণে চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় মাতাব্বররা দুই ফুট রাস্তা ছাড়ার জন্য জমি ক্রেতাদের বললেও রাস্তার জন্য কোন জায়গা ছাড়ছেন না তারা।
এতে আমাদের পাঁচটি পরিবারের যাতায়াতে চরম সমস্য দেখা দিয়েছে।
পৌর আইনে প্রতিবেশীদের চলাচলের সুবিদ্ধার্থে রাস্তা ছাড়ার বিধান থাকলেও সেই আইনী সুবিধা পাচ্ছিনা আমরা।
চলাচলের পথ বন্ধ করা জমি ক্রেতাদের বক্তব্য
চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণে কথা স্বীকার করেছেন জমি ক্রেতা রহিম। তিনি বলেন, আমার দুই শালিকার নামে ওই জমিটুকু কেনা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপে দুই ফুট রাস্তা ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
রাস্তার জন্য ছাড়ার ওই দুই ফুট জায়গার বিপরীতে সুবিধাভোগীরা আমাকে দুই ফুট জায়গা দেয়ারও সিদ্ধান্ত দেন কাউন্সিলর। প্রতিবেশীরা জায়গা না দেয়ায় আমি দেয়াল নির্মাণ করেছি।
জমি ক্রেতা সত্তর বলেন, আমার জমি এক অংশ দিয়ে রাস্তা ছাড়া আছে। এক জমির দুই দিক দিয়ে রাস্তা দেয়া কি সম্ভব?
স্থানীয় মাতাব্বরের বক্তব্য
পাঁচ পরিবারের চলাচলে চরম অসুবিধা কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় মাতাব্বর বাবর আলী। তিনি বলেন, আমরা কয়েকবার রাস্তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।
সমাধানের জন্য আমি ওই জমি ক্রেতাদের রাস্তার জন্য তিন ফুট জমি ছাড়লে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে দুই ফুট জমি নিয়ে দিব এমন প্রস্তাবও দিয়েছিলাম।
তবে রহস্যজনক কারণে আমাদের সেই প্রস্তাবও মানেননি তারা। বিষয়টির সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
পৌর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলীম বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোছা: মাহমুদা বেগম জেবু জানান, প্রতিবেশীদের চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে অবশ্যয় রাস্তা ছাড়তে হবে জমির মালিকদের। অভিযোগ দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।