নিজস্ব প্রতিবেদক : বানিজ্যিকভাবে লেবু উৎপাদনের জন্য টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটি, পুটিয়াজানী ও লাউহাটি সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত।
লাউহাটি, ফাজিলহাটি ও পুটিয়াজানী বাজার থেকে এই এলাকায় বানিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের লেবু এলাকার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে।
এই এলাকায় লেবু চাষ করে অনেক পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে জীবনের ঝুঁকিতে পড়েছে এসিল্যান্ডরা
এলাকার অনেক অনাবাদি জমিসহ আবাদি জমিতেও এখন বেশিরভাগ লোক লেবু চাষ করছে।
অনেকে আবার অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
জানা যায়, দেলদুয়ার উপজেলায় সারাবছরই লেবুর ফলন হয়।
বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে ফাল্গুন মানে ফলন অনেকটা কম হয়। আর এই সময়ে লেবুর চাহিদা থাকে বাজারে।
তাই অন্যান্য সময় লেবুর দাম কম থাকলেও চৈত্র মাসে লেবুর বাজার একটু চড়া থাকে।
তার উপর রোজার বাড়তি চাহিদায় লেবুর দাম পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় বেড়েছে ৩০ ভাগেরও বেশি।
পাইকারি বাজারে যে লেবু গত সপ্তাহেও প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, সেই লেবু এখন বস্তা প্রতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায়।
প্রতি বস্তায় ১১৫ থেকে ১২০ কেজি লেবু ভরা হয়। পাইকারি বাজারেই প্রতিটি লেবু বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭ থেকে ৮ টাকায়।
বুধবার দুপুরে দেলদুয়ারের পুঠিয়াজানি, ফাজিলহাটি ও লাউহাটি এলাকায় লেবুর পাইকারি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
লেবু চাষী ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য –
ফাজিলহাটি মেরুয়া ঘোনা গ্রামের লেবু চাষী ময়নাল হক বলেন, আমি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত লেবু চাষ করি।
প্রায় এক একর জমির উপর আমার লেবুর বাগান। ফাল্গুনের শেষ দিকে লেবুর ফলন কম হয়।
আবার রোজা শুরু হয়েছে, তাই লেবুর চাহিদা বেড়েছে অনেক বেশি। এজন্য লেবুর দামও বেড়েছে।
এসময় তিনি আরো জানান, রোজার মাঝামাঝি সময়ে লেবুর দাম অনেকটাই কমবে। কারণ ১৫ দিনের মধ্যেই সাগরদীঘি এলাকার লেবু বাজারে আসবে।
আরো পড়ুন – সাবেক কৃষিমন্ত্রীর আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে কৃষি জমি দখল ও মাটি ভরাটের অভিযোগ
পুঠিয়াজানী এলাকার লেবুর পাইকারি ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলাম বলেন, ভালো লেবু প্রতি বস্তা ১০ হাজার টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না।
তবে মাঝারি, ছোট ও একটু নিম্নমানের লেবু কিনতে হচ্ছে ৭ হাজার টাকা বস্তা।
অপর পাইকার মাহতাব বেপারী জানান, এক বস্তা লেবু ঢাকায় নিতে ট্রাক ভাড়া দিতে হয় ৩০০ টাকা। উঠানো-নামানোতে শ্রমিকদের দিতে হয় ১৪০ টাকা। এছাড়াও আড়ৎ-এ চাঁদা দিতে হয় ২০০ টাকা।
লেবু কেনার পরও ঢাকার পাইকারি বাজারে নিতে ৬৪০ টাকা খরচ হয় প্রতি বস্তায়।
ঢাকার পাইকারি বাজার থেকে কয়েক হাত ঘুরে ক্রেতাদের হাতে লেবু যায়। তাই অনেক বেশি দামে লেবু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
এদিকে মধুপুরে গারোর বাজারে একই চিত্র বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার লেবু চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
লেবু চাষী আরশেদ আলী জানান, দেলদুয়ার অঞ্চলের চেয়ে লেবুর দাম তাদের এলাকায় কিছুটা কম। তবে ঢাকায় নিতে পরিবহন খরচ বেশি।
ফাজিলহাটি গ্রামের লেবু চাষী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করেছেন।
প্রায় ১০০ টাকা কেজি দরে লেবু বিক্রি করতে পেরে তিনি খুব খুশি। বললেন, এক সপ্তাহ আগে বিক্রি করলে দাম পেতাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
কৃষি কর্মকর্তার বক্তব্য –
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার দুই হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে।
তার মধ্যে মধুপুর উপজেলায় এক হাজার হেক্টর এবং দেলদুয়ার উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর।
এই দুই উপজেলায় উৎপাদিত লেবু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।