টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে কাজী নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বইকে ধর্মবিরোধী উল্লেখ করে খেলাফত যুব মজলিসের এক নেতার নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাতে একটি পাঠাগার থেকে পাঁচ শতাধিক বই নিয়ে গেছে একদল যুবক। তারা পাঁচটি বস্তায় ভরে বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছে। ওই যুবকদের দাবি, তারা যে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে এসেছে তা ধর্ম বিরোধী। এ বইগুলো পড়ে যুব সমাজ ধর্মবিরোধী হয়ে উঠছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শাহিন মাহমুদ শনিবার বিকেলে বলেছেন, কারো অনুমতি ছাড়া বইগুলো পাঠাগার থেকে যুবকরা নিয়ে এসেছে। উভয় পক্ষকে নিয়ে রোববার বিকেলে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বৈঠক হবে।
লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের কথা –
অভ্যয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দূর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, ‘যৌক্তিক দ্বিমতকে স্বাগত’ এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে ২০১৫ সালে অভ্যয়ারণ্য পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা দেড় শতাধিক। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে একদল যুবক পাঠাগারে এসে বই বস্তায় তুলতে শুরু করে। তারা হুমকি দিয়ে বলে এখানে কোন পাঠাগার থাকতে দিবে না। বই পুড়িয়ে ফেলবে। এসময় ধনবাড়ী থানার একজন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হলে তারা বই গুলো না পুড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। পাঠাগার থেকে বই নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন খেলাফত যুব মজলিস ধনবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ। তার সঙ্গে ১০/১৫ জন যুবক ছিলো।
গোলাম রব্বানি বলেন, অভ্যয়ারণ্য পাঠাগার যারা পরিচালনা করেন তারা নাস্তিক। ইসলাম, হিন্দুসহ সব ধর্মের বিরোধী। গত বুধবার এই পাঠাগারের সদস্য আশিক নোমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম বিরোধী একটি পোষ্ট দেয়। আমরা তাকে ডেকে কথা বলি। সে তার ভুল বুঝতে পারে। তার কাছ থেকে জানতে পারি সে ওই পাঠাগারের সাথে জড়িত হয়ে ধর্ম বিরোধী হয়ে উঠেছে। এজন্য গত বৃহস্পতিবার আমরা ওই পাঠাগারে গিয়ে যে বইগুলো ধর্মবিরোধী মনে হয়েছে তা নিয়ে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি। এখানে বই লুটপাতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দূর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, ওইদিন যুবকরা যে বইগুলো নিয়ে গেছে তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জিব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই রয়েছে। এ বই গুলোর কোনটিই ধর্ম বিরোধী নয়।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিন মাহমুদ জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরই তিনি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাঠাগার পরিদর্শন করেছেন। উভয় পক্ষের সাথে কথা হয়েছে। পরদিনই বৈঠকের কথা ছিলো। কিন্তু একপক্ষ শুক্রবার সময় দিতে পারবে না, আরেক পক্ষ শনিবার সময় দিতে পারবে না। পরে রোববার বিকেলে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের সভাপতি আবদুস ছাত্তার খান বলেন, পাঠাগার থেকে যারা বই নিয়ে গেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।