টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বহুল আলোচিত গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ভবন নির্মিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক বইছে। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ৩ বছর পর এ অস্থায়ী ভবন পেয়ে এর শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বেশ আনন্দিত।
বিদ্যালয় নদী গর্ভে, পাঠদান চলছে একটি বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নীচে শিরোনামে বিভিন্ন স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকায় গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র নিয়ে এমন সংবাদ পরিবেশনের পর সেসময় জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে দ্রুত অস্থায়ী ভবন নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তা যেন অধরাই থেকে যাচ্ছিল।
অবশেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের জন্য ৫ লক্ষ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ে চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি অস্থায়ী ভবন নির্মান করা হয়েছে। থাকছে শিক্ষার্থীদের জন্য টয়লেট ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। ভবন নির্মিত হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে খুশির জোয়ার বইছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আজম আলী বলেন, বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। এবার বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভবনটি ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম পাড়ে নির্মান করেছি যাতে আর ভাঙ্গনের মুখে না পড়ে।
শিক্ষার্থী পায়েল আক্তার বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ভবন নির্মিত হওয়ায় আবেগ আপ্লুত হয়ে বলে এখন থেকে আর আমাদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হবে না। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ে আর আমাদের কষ্ট করতে হবেনা। আমরা ভালভাবে আমাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জি এম ফুয়াদ মিয়া বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টির অস্থায়ী ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। আশা করছি নতুন বছরে শিক্ষার্থীরা নব নির্মিত ভবনে নতুন উদ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। তাছাড়া আমরা সেখানে আগামী বই উৎসবের আয়োজন করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে দীর্ঘদিন গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কষ্ট ভোগ করেছে। আপনারা জানেন বর্তমান সরকার চরাঞ্চলের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছে। তাই আমি নিজে ঐ এলাকায় গিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ভাঙ্গন কবলিত এলাকা নির্ধারন করে অস্থায়ী ভবন নির্মানের ব্যবস্থা করেছি। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালের বন্যায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় নাগরপুর উপজেলার গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। এরপর থেকেই পাঠদান চলেছে একটি বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নীচে। বিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন চারজন শিক্ষক। তিনটি শ্রেণির পাঠদান একসঙ্গে চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারো কথা ভালো ভাবে শুনতে পারেনা। রোদ, গরম ও শীতের কনকনে হাওয়াকে চোখ রাঙিয়ে এতদিন ধরে চলছে পাঠদান। বৃষ্টি নামলেই ছুটি দিতে বাধ্য হতেন শিক্ষকরা।