টাঙ্গাইলের নাগরপুরে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা করোনার প্রভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের (কেজি) শিক্ষকদের পরিবারে চলছে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ। কারণ তাদের পরিবার চলে শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। অসচ্ছল পরিবারের এসব শিক্ষকের সহায়তায় কেউ এগিয়ে না আসায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকালে প্রনোদনার দাবীতে নাগরপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন সমিতি উপজেলার নয়ান খান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপী এক মানববন্ধন করেছে।
জানা গেছে, নাগরপুর উপজেলার ৭৫টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কমপক্ষে ৭০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। তারা প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই শিক্ষার্থীর মাসিক বেতনের টাকায় পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের টাকায় শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। তা দিয়ে চলে শিক্ষকদের অসচ্ছল পরিবারের ভরণ-পোষণ।
কিন্তু করোনার প্রভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বেতনও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে এসব শিক্ষকের প্রাইভেট টিউশন। ফলে কোনোদিক থেকেই তারা উপার্জন করতে পারছেন না। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অর্থবিত্ত না থাকলেও সমাজে তারা শিক্ষক হিসেবেই সম্মানীয়। ফলে তারা না পারছেন লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে, না পারছেন মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে। ফলে এখন তারা তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, কেজি স্কুলে শিক্ষকতা ও প্রাইভেট পড়িয়ে কোনো রকমে পরিবারের খরচ সামাল দিয়েছি। এমনিতেই কেজি স্কুল থেকে ঠিকভাবে বেতন পাই না তার ওপর করোনায় লকডাউন চলছে। ফলে অসচ্ছল শিক্ষকদের পরিবারে অভাব অনটন চলছে। শিক্ষিত মানুষ চক্ষুলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতেও পারছি না আবার সইতেও পারছি না। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবান মানুষরা যেন আমাদের কষ্টটা একটু বোঝার চেষ্টা করেন।
নাগরপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন সমিতির সভাপতি মীর ওবায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদের কেজি স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় না। এই দুর্যোগমুহূর্তে এখনও পর্যন্ত শিক্ষকরা সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় তাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে। তাই সরকারের কাছে চলমান দুর্যোগে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি সহায়তার আবেদন জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে নাগরপুরের ৪৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নাম-পরিচয় মোবাইল নম্বরসহ তালিকা তৈরি করে একটি আবেদন করছি। এতে করোনাকালে এসব শিক্ষক-কর্মচারীকে সরকারি অনুদান ও আর্থিক প্রাপ্তির প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়ে নাগরপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন সমিতির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বিষয়ে জানানো হবে।