একাত্তরের মার্চ; বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি জান্তার অনাগ্রহের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে মুক্তিকামী জনতা। মানুষের কণ্ঠরোধে চালানো হয় গুলি। মার্চের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলো পেরিয়ে বাঙালি রাজপথ কাপায় সাহসী শক্তিতে।
অর্ধশত বছর আগের সেই ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর নামে চূড়ান্ত হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে মুক্তিকামী জনতাও গড়ে তোলে প্রতিরোধ। একাত্তরের ৯ মাসে বীর বাঙালি, হানাদার ও তাদের দোসরদের চূড়ান্ত শিক্ষা দেয় বাঙালিরা। সেই বাংলা মায়ের শত কষ্টের পর ধরনীতে জন্ম হয় ‘বাংলাদেশ’ নামে এক শিশুর। যে শিশু জন্মের আগে পার করেছে কঠিন সংগ্রামের পথ। এ দেশকে জন্ম দিতে বিলিয়ে দিতে হয় ৩০ লাখ মানুষের জীবন আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ।
সেই চির সত্যকথনের শুরু সত্তরের নির্বাচনে পাকিস্তানের ক্ষমতা বাঙালির হাতে আসার রায় থেকে। ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা অজুহাত তৈরি করে ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার। ১ মার্চ স্থগিত করা হয় অধিবেশন। ফুঁসে ওঠে বাঙালি। ঘটনা প্রবাহে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের মুক্তির সনদ। বীর বাঙালি সে দিন থেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে।
একাত্তরের মার্চের ঘটনা
প্রবাহে স্পষ্ট হয়ে যায় পাকিস্তানিরা বাঙালির হাতে ক্ষমতা দেবে না। বাঙালিকে দমিয়ে রাখাও সম্ভব হবে না, তাই ২৫ মার্চ রাতেই আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি নরপশুরা। এক রাতেই হত্যা করে হাজার হাজার মানুষ। এমন সময়ই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসে স্বাধানীতার ঘোষণা। মুক্তির এক দফা সনদকে বাস্তবে রূপ দিতে ঝাপিয়ে পড়ে কোটি বাঙালি। শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তির যুদ্ধ, বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।
যে মানুষগুলো এতোদিন দ্বিধায় ছিলো, স্বাধীন মাতৃভূমির আশায় তারা ঝাপিয়ে পড়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে। বাঙালির পাকবাহিনীর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না কিন্তু ছিল বুক ভরা অদম্য সাহস। অকুতোভয় বাঙালি ছেড়েছিল প্রাণের মায়া।
এই মার্চ থেকেই শুরু হওয়া যুদ্ধে প্রাণ হারান ত্রিশ লাখ মানুষ। পাকিস্তানি নরপশুদের হাতে নির্যাতিত হয়েছিল ২ লক্ষ নারী। শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাধীন দেশের স্বাদ দিতে এতো আত্মত্যাগের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনে আজও মিশে আছে মুক্তির স্বাদ, মার্চের স্মৃতিকথা। নতুন দেশের সোদা মাটিতে কৃষক যখন ফসল ফলায় সেখানে এখনও মিশে থাকে মুক্তির চেতনা।
ছোট্ট শিশুটি মুক্ত বাতাসে যখন মাথা উঁচু করে দৌঁড়াতে থাকে সেই চিত্রতেও মিশে থাকে শহীদদের আত্নত্যাগ। ৫৪ বছরের এই ছোটো ছোটো চিত্রগুলোই প্রতি মুহূর্তে আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার কথা; আমার-আপনার মুক্তির কথা।