বিশেষ প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের বন বিভাগের আওতাধীন বাঁশতৈল রেঞ্জ। এই রেঞ্জের অধীনে রয়েছে ৬টি বিট অফিস। বিটগুলো হলো, বাঁশতৈল সদর, পাথরঘাটা, বংশীনগর, হাটুভাঙ্গা, নলুয়া ও কুড়িপাড়া।
বংশীনগর বিটের দায়িত্বে আছেন একজন বন প্রহরী। ভারপ্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; আর এই দায়িত্ব পেয়েই মাত্র এক বছরে তিনি প্রায় কোটিপতি হয়ে গেছেন।
বনের মধ্যে টাকার বিনিময়ে গাছ কেটে ঘর তৈরি করতে দেয়া, ঘর তৈরি পর মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা, টাকা খেয়েও মামলা দেয়া, জেল খাটানো, প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানো, টাকার বিনিময়ে অপরাধীকে বাদ দিয়ে নিরাপরাধীকে আসামি করে মামলা দেয়া, রাতের অন্ধকারে গজারী বিক্রি, বনের ভিতরে বেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রিতে সহযোগিতা, বাগানের প্লট বরাদ্দের জন্য ঘুষ নেয়া, এক প্লটকে একাধিক প্লট করে নতুন প্লট গ্রহীতাদের কাছ থেকে মোট অংকের ঘুষ গ্রহণ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন এই বন প্রহরী থেকে ভারপ্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা।
যে সকল অভিযোগ :
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বংশীনগর বিট এলাকার ১২৬৩ দাগের ৪৭ নং প্লটটি মালিক মো. শফিকুল ইসলামের নামে বরাদ্দকৃত। সেই প্লটে শফিকুল তার একলক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রবাসী আয়নাল হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া (৩০)কে ঘর করতে দেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে জানাজানি হলে তরিঘরি করে সুফিয়ার নামে একটি মামলা দায়ের করে বন বিভাগ।
তরিঘরি করে মামলা করতে গিয়ে সুফিয়া (৩০) এর পরিবর্তে আয়না খাতুন নামে মামলা দায়ের করে রাতেই গ্রেপ্তার করে তাকে।
এর আগে বিট কর্মকর্তা ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে শফিকুল ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া হয়। শফিকুল ইসলাম ওই রাতেই একটি বাছুর বিক্রি করে এই ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। পরে ক্রেতার কাছ থেকে বাছুর বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ওই একলক্ষ টাকা লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী বাঁশতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আলী রাজকেও আসামী করা হয়।
পরবর্তীতে আয়না খাতুন (সুফিয়া) তিন দিন আর আলী রাজ ২১ দিন হাজতবাস করেন ওই মামলায়।
এছাড়াও ওই এলাকায় গড়ে উঠা কাঠের ফার্নিচারের দোকান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে নিয়মিত টাকা আদায় করে থাকেন এই বিট অফিসার।
এই বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হয়নি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রিয়াজ নামের এক ব্যবসায়ী বিরুদ্ধে মামলা করলে তাকে হাজতবাস করতে হয়।
ভূক্তভোগীদের বক্তব্য :
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী জানান, তিন পাঁচ শতাংশ জমির উপর একটি ঘর তুলতে দুই কিস্তিতে দেড় লক্ষ টাকা দেই।
তারপর আমি আমার ঘরের কাজ শুরু করি। এখন আবার টাকা দাবি করতেছে, দিতে অস্বীকার করি; তখন বিট অফিসার রমিউজ্জামান আমাকে মামলার হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
মামলার আসামি এই আয়না খাতুন (আসল নাম – সুফিয়া) বলেন, আমি এক লক্ষ টাকা দিয়েছি। তারপর আমাকে ঘর করতে দিয়েছে।
পরে আরো টাকা দাবি করে বিট অফিসার রুমি। টাকা না দিলে বিট অফিসার রুমি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন; পরে আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর চালায়; আমাকে জেলখানায় পাঠায়।
এই মামলার আসামি বাঁশতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আলী রাজ জানান, এই এলাকায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে ভূমিহীনদের থাকতে দেয়।
এরকমই একটি পরিবারকে আমার মধ্যস্থতায় তারা থাকতে দিয়েছিল। প্লটের মালিক ও বিট অফিসার টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
কিন্তু পরবর্তীতে আরো টাকা দাবি করায় আমি প্রতিবাদ করি; তখন বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে ওই প্রবাসী আয়নাল হোসেনের স্ত্রী ও আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন বিট কর্মকর্তা রমিউজ্জামান।
অভিযোগ করে প্রবাসী জনি আহমেদের স্ত্রী কাকলী আক্তার (২৩) জানান, আমি এ পর্যন্ত আমি দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছি; বিট অফিসার রমিউজ্জামান এক লক্ষ টাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এই ঘটনাটি জানাজানি হলে বিট অফিসার আমাদের ঘর ভেঙে দেয়; আর কাউকে বললে আমার স্বামীর নামে মামলা করে বিদেশে না জেলে পাঠানোর যাওয়া বন্ধ করবে বলে হুমকি দেয়।
তখন আমরা কিছুই বলি নাই তারপরও মামলা করেন রমিউজ্জামান।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য :
এই বিষয়ে বিট অফিসার রমিউজ্জামান এর সাথে কথা বলতে গেল তিনি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন; আর বলেন, যা পারেন করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে বাঁশতৈল রেঞ্জের রেঞ্জার মো. আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না; জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার