মার্কিন কংগ্রেসে কোণঠাসা প্রযুক্তি মোড়লরা

বাজারে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে গুগল এবং ফেইসবুক, বিশেষভাবে এই প্রতিষ্ঠান দু’টির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান প্রতিনিধিরা।

প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, চার প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানই এমন আচরণের কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছেন মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভস-এর চেয়ারম্যান।

ফেইসবুক, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট এবং অ্যাপলের সম্মিলিত বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাজারের দখল বাড়াতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো একই ধরনের ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দমিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

মার্কিন কংগ্রেসে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই শুনানীর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নীতিনির্ধারকদের সামনে একসঙ্গে হাজির হয়েছেন এই চার প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী।

এবারই প্রথম কংগ্রেসের মুখোমুখি হয়েছেন অ্যামাজন প্রধান জেফ বেজোস। বেজোসের চেয়েও কম প্রশ্নবাণ এসেছে অ্যাপল প্রধান টিম কুকের দিকে এবং সেগুলোর কার্যকর জবাবও দিয়েছেন তিনি।

নীতিনির্ধারকদের প্রশ্নে তুলনামূলক বেশি কোণঠাসা হয়েছেন ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। অভ্যন্তরীণ ইমেইল নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হোঁচট খেয়েছেন তিনি।

সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের তীর এসেছে অ্যালফাবেট এবং গুগল প্রধান সুন্দার পিচাইকে লক্ষ্য করে। প্রশ্নের জবাব দিতেও সবচেয়ে অপ্রস্তুত মনে হয়েছে পিচাইকে। বারবারই নীতিনির্ধারকদেরকে পিচাই বলেন, “আমি এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং আপনাদেরকে এটি জানাবো।”

শুনানির এক পর্যায়ে একে অপরের দিকে চিৎকারও করেছে নীতিনির্ধারকরা। মহামারীর প্রসঙ্গ তুলে একজন চিৎকার করে বলেন “আপনার মাস্ক পরুন!”

গুগলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে অ্যান্টিট্রাস্ট শুনানির সুর বেঁধেছেন প্যানেল চেয়ারম্যান ডেভিড সিসিলিন।

ইয়েপ ইনকর্পোরেটেড থেকে পর্যালোচনা চুরি এবং বিরোধিতা করলে অনুসন্ধান ফলাফল থেকে ইয়েপকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে, গুগলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে সিসিলিন বলেন, “সৎ ব্যবসা থেকে গুগল কনটেন্ট চুরি করছে কেনো?”

এমন প্রশ্নের জবাবে পিচাই বলেন, এই অভিযোগের বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য জানতে চান তিনি। অভিযোগের বিরোধিতা করে গুগল এবং অ্যালফাবেট প্রধান বলেন, “আমরা আমদেরকে উচ্চমান হিসেবে বিবেচনা করি।”

২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। ইনস্টাগ্রাম ফেইসবুকের জন্য হুমকি হতে পারে, একারণেই ফেইসবুক এই অধিগ্রহণ করেছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন নীতিনির্ধারক প্যানেল।

জবাবে জাকারবার্গ বলেন, অধিগ্রহণের সময় ছোট একটি ছবি শেয়ারিং অ্যাপ ছিলো ইনস্টাগ্রাম, সামাজিক মাধ্যমের কোনো বিস্ময় নয়।

ডেমোক্রেট প্রতিনিধি প্রামিলা জয়াপাল প্রশ্ন করেন, ফেইসবুক কী কখনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানকে নকল করেছে?

উত্তরে জাকারবার্গ বলেন, “আমরা এমন কিছু ফিচার যোগ করেছি, যা প্রথমে অন্য প্রতিষ্ঠান এনেছে।”

“কতোগুলো প্রতিষ্ঠানকে ফেইসবুক নকল করেছে? পাঁচের কম? পঞ্চাশের কম?” আবারও প্রশ্ন করেন জয়াপাল।

এবারে জাকারবার্গ বলেন, “কংগ্রেসউইম্যান, আমি জানিনা।”

অ্যামাজন প্রধান জেফ বেজোসকেও প্রশ্ন করে চাপে ফেলেছেন জয়াপাল। বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে অ্যামাজন তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার ডেটা ব্যবহার করেছে কি না জানতে চেয়েছেন তিনি। এর আগে শপথ নিয়ে এমন চর্চার কথা অস্বীকার করেছেন অ্যামাজনের এক নির্বাহী কর্মকর্তা।

সতর্কতার সঙ্গে জবাবে বেজোস বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা রয়েছে। “আমরা যদি জানতে পারি কেউ এটি অমান্য করছে, আমরা তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো।”

এদিকে অ্যাপ স্টোরের জন্য ডেভেলপারদের কাছ থেকে অ্যাপল যে কমিশন নেয় তা বাড়ানো নিয়ে অভিযোগ করেছেন নীতিনির্ধারকরা। জবাবে অ্যাপল প্রধান টিম কুক বলেন এটি আটকানোর কোনো কারণ নেই।

“আমি কঠোরভাবে এতে অসম্মতি জানাচ্ছি। ডেভেলপারদের প্রতিযোগিতার বিষয়ে- অ্যান্ড্রয়েড বা উইন্ডোজ বা এক্সবক্স বা প্লেস্টেশনের জন্য তারা অ্যাপ প্রোগ্রাম করতে পারেন। ডেভেলপার এবং গ্রাহকের দিক থেকে আমাদের তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে, এটি এমনই প্রতিযোগিতা যে আমি এটিকে রাস্তার লড়াই বলবো,” বলেন কুক।

প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট অভিযোগ এবং কী কী পরিবর্তন আনা দরকার সে বিষয়ে গ্রীষ্মের শেষে বা বসন্তের শুরুতে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে কমিটি।

সূত্র: bangla.bdnews24.com