ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়ক পরিচয়ে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন বাসা দখল করে ১৭ মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে আবাসনের চেষ্টা করায় মুচলেকায় ছাড়া পেলেও একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী মারিয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মেদ।
জানা যায়, গত শনিবার ৮ মার্চ সকালে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়ক পরিচয়ে মারিয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি জোয়াহেরুল ইসলামের বাসার তালা ভেঙে প্রায় ১৭ নারী-পুরুষ ভারসাম্যহীন রোগী নিয়ে সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। এরপর সারাদিন চলতে থাকে নানান নাটকীয়তা। ঘটনাটি জানলেও টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশ এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। এই বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মেদ বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ওই দিন গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদের ওপর ভিত্তি করে রাত সাড়ে ১০টার পর টাঙ্গাইল পৌর শহরের ছোট কালিবাড়ীতে অবস্থিত ওই ভবনটি যৌথবাহিনীর অভিযানে দখলমুক্ত করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীরা দখলের বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পর প্রশাসন সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে বাড়িটি দখলমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
মুচলেকা নিয়ে প্রশাসন যা বলে –
রবিবার (০৯ মার্চ) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন শরিফ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিযানের পর তিনি বলেন, “মারিয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামে এক নারী সাবেক সংসদ সদস্যের বাসাটি অবৈধভাবে দখল করে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জন নারী-পুরুষকে আবাসনের চেষ্টা করে। পরে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়। বাড়িটি কয়েক ঘন্টার মধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয় এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে সরকারের ব্যবস্থাপনায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত নারী এ ধরণের কর্মকাণ্ড করে অপরাধ করেছেন মর্মে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ করবেন না মর্মে প্রত্যয়ন দেন। মুচলেকায় তার স্বামীসহ মোট ৫ জন সাক্ষী স্বাক্ষর করেন। বিশ্ব নারী দিবস ও আত্মশুদ্ধির মাস রমজান বিবেচনায় ভুল শুধরে নেওয়ার একটি সুযোগ দিতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ধরণের পোস্ট করলে এবং সরকারি বা বেসরকারি সম্পদ ভাংচুর বা দখলসহ অন্য কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হলে আইনগভাবে অধিকতর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মুচলেকায় যা বলেন মিষ্টি –
মুচলেকায় তিনি বলেন, আমি আইনি অধিকার ব্যতিরেকে অন্যের ব্যক্তিগত বাড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জন নারী-পুরুষকে আবাসনের চেষ্টা করে অপরাধ করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার পোস্টের কারণে ক্ষেত্র বিশেষে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তার দায় আমার উপর বর্তায়। আমি আমার নেতিবাচক ও বেআইনি কৃতকর্মের জন্য মানবিক বিবেচনায় ক্ষমাপ্রার্থী।
তিনি আরও বলেন- ভবিষ্যতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয় এমন ফেসবুক পোস্ট করা এবং ব্যক্তিগত বা সরকারি সম্পদ দখল বা ভাংচুর করাসহ অন্য কোনো প্রকার অপরাধে লিপ্ত হব না। আমি প্রদত্ত মুচলেকা ভঙ্গ করলে প্রচলিত আইনে আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে তার বিপরীতে আমার কোনো আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না।
এরপর যা ঘটে –
এরপর ৯ মার্চ (রবিবার) টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এড. জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এর স্ত্রী রওশন আরা খান বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে মারিয়ম মোকাদ্দেস মিষ্টিকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের পর টাঙ্গাইল সদর থানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করা হয়। মামলা নং-১৫, তারিখ- ০৯ মার্চ, ২০২৫; ধারা-১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৪২৭/৩৮৫/৩৮০/৫০৬/৩৪ সহ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
অপরদিকে, জেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘটনার বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারা মিষ্টির কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতি প্রদান করে। পাশাপাশি তারা চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। এলাকাবাসী জবরদখলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরণের কর্মকাণ্ড ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।