মা তার মেয়েকে কাঁদিয়ে সুখের হাসি হাসছেন। মা নিজেই তার মেয়ের সংসার ভেঙে মেয়ের জামাইয়ের সাথে বিয়ে বসেছেন বলে সাফ জানিয়ে দেয়। আর এমনই এক ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইল গোপালপুরের কড়িয়াটা গ্রামে।
দাম্পত্য কলহের জের ধরে বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় গোপালপুরের কড়িয়াটা গ্রামে শনিবার এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় বিষয়টি নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে। ভিডিও – https://youtu.be/q00BIdxw22k
এক গ্রাম্য সালিশী বৈঠকে মেয়ের স্বামীকে দিয়ে মেয়েকে তালাক দিয়ে নিজেই মেয়ে জামাইয়ের সাথে বিয়ে বসেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোনছের আলী গত ২ অক্টোবর গোপালপুর উপজেলার কড়িয়াটা গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে নূরন্নাহার খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরদিন শ্বাশুড়ি মাজেদা বেগম মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। মেয়ের সাথে এক সপ্তাহ সেখানে অবস্থানের পর গত শুক্রবার বর কণেসহ নিজবাড়ি ফেরেন তারা।
শনিবার সকালে নূরন্নাহার বরের সাথে সংসার করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে শুরু হয় পারিবারিক কলহ। এসময় শ্বাশুড়ি মাজেদা বেগম তখন নূরন্নাহার সংসার না করলে তিনি নিজেই নতুন জামাতার সংসার করবেন বলে জানান।
অবস্থায় শ্বশুর নূর ইসলাম গ্রাম্য সালিশ ডাকেন। গোপালপুরের হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমাণ্য লোকজন সালিশী বৈঠকে বসেন।
বিচার চলাকালীন মাজেদা বেগম ও মোনছের আলীকে দোষী সাব্যস্থ করে মারধরও করা হয়। এক পর্যায়ে পুরা পরিবারের সম্মতিতে নূর ইসলাম প্রথমে স্ত্রী মাজেদা বেগমকে তালাক দেন। এরপর বর মোনছের আলী নববধু নূরন্নাহারকে তালাক দেন। এরপর সবার উপস্থিতিতে মোনছের আলীর সাথে মাজেদা বেগমের এক লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়। হাদিরা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী জিনাত এই তালাক ও বিয়ে সম্পন্ন করেন।
এর আগে গত ২ অক্টোবর দরিদ্র ঘরের মেয়ে হলেও নুরুন্নাহার খাতুনের (১৯) সাথে মোটামুটি ধূমধাম করে বিয়ে হয়েছিল মোনছের আলী (৩২) এর সঙ্গে। শ্বশুরবাড়ি এক সপ্তাহ কাটানোর পর গত শুক্রবার বাবার বাড়ি ফিরে আসে মেয়েটি। পরের দিন শনিবার বিকালেই তার ঘর ভাঙ্গে। শ^াশুড়ি রাজী থাকায় বর মোনছের আলী শ্বশুর বাড়ি এসে নববধূকে তালাক দিয়ে শ্বাশুড়ি মাজেদা বেগমকে (৪০) বিয়ে করে নিয়ে যায়। তবে শ্বাশুড়িকে ঘরে উঠিয়ে লাপাত্তা মোনসের আলী।
হাদিরা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী জিনাত জানান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গ্রাম্য মাতব্বর এবং ওই পরিবারের সকল সদস্যের সম্মতিতে দুটি তালাক এবং একটি বিবাহের কাজ একই অনুষ্ঠানে সম্পাদন করা হয়।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, পুরো কাজটি হয়েছে ওই পরিবারের সম্মতিতে। তবে শ্বাশুড়ি বিয়ে করার ঘটনায় আপত্তি থাকায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে মোনছের ও মাজেদাকে শারীরিক শাস্তি দেয়া হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার জানান, শ্বাশুড়ি বিয়ের খবরে ক্ষুব্দ গ্রামবাসী বাড়ি ঘেরাও করে মারপিট শুরু করেন। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। পরিবারের সকলের সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তিনি বিয়ের সম্মতি দেন। এদিকে জামাই-শ্বাশুড়ি বিয়ের খবরে ওই গ্রামে ভিড় করছে উচ্ছুক জনতা।
তবে জামাই মোনসের আলী বিয়ের পর থেকেই লাপাত্তা বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
এ ব্যাপারে গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি আমিও শুনেছি। উভয় পক্ষের সম্মতিতেই নাকি এ ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করতে আসেনি। কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।