ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন : আজ ১১ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামছুল হকের ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের জন্মকালীন নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।
শামছুল হক ছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক দলের প্রথম মেনিফেস্টো রচয়িতা এবং দলের নামকরণও তিনিই করেছিলেন।
বর্তমান প্রজন্ম শামছুল হককে না চিনলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বঙ্গরত্নটিকে অসম্ভব সম্মান করতেন।
যার প্রমাণ বঙ্গবন্ধু রেখে গেছেন তাঁর নিজ হাতে লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”তে।
বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে যতবার শামছুল হকের নাম উল্লেখ করেছেন, ততবার তিনি তাকে শামছুল হক সাহেব বলে সম্বোধন করেছেন।
এবার জেনে নেয়া যাক সেই বঙ্গরত্ন শামছুল হকের জীবন ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা –
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিত –
১৯১৮ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের এলাসিন মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন শামছুল হক। নিজ গ্রামের নাম মাইঠান-টেউরিয়া।
ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব, পিতা- দবির উদ্দিন, মাতা- শরিফুন্নেসা, শিশু জন্মের পর আকিকা করলেন এবং বঙ্গরত্ন শিশুটির নাম রাখলেন মো. শামছুল হক।
শামছুল হকের পূর্ব পুরুষ মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১৪৮৩ সালে হযরত বাবা আদম ফকিরের সাথে বিক্রমপুরে আগমন করেন।
অবশেষে হানিফ সরকার অর্থাৎ শামছুল হকের দাদামহ টাঙ্গাইল আগমন করেন ১৮১৮ সালে।
শিক্ষা জীবন –
সন্তোষ জাহ্নবী স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে অসাধারণ মেধা প্রদর্শন করে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন তারপর আই.এ ক্লাসে ভর্তি হন করটিয়া সা’দত কলেজে।
করটিয়া সা’দত কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই সকলের নয়নমণি হয়ে উঠেন শামছুল হক।
তখন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন সা’দত কলেজের রূপকার প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ।
তিনি প্রথম দর্শনেই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় তরুণ ছাত্র শামছুল হককে চিনে নেন।
ফলে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ তাঁর কলেজের ছাত্র সমস্যার প্রতিটি কাজে তাঁর প্রিয় ছাত্রকে ডাকতেন।
এ সময় শামছুল হকের লেখালেখির স্পৃহা দেখে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ তার দেয়াল পত্রিকা ‘বাতায়নে’ তার প্রিয় ছাত্রকে লেখার স্থান করে দেন।
শামছুল হকের বিখ্যাত রাজনৈতিক গ্রন্থ ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম’ লিখতেও প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ তাঁর প্রিয় ছাত্র শামছুল হককে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন।
মূলত স্কুল জীবন থেকেই শামছুল হকের মধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দেখা যায়।
বৈবাহিক ও পারিবারিক জীবন –
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর, তিনি ইডেন কলেজের ইংরেজি অধ্যাপিকা আফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন।
দুই কন্যা ড. শাহীনের জন্য হয় ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ৯ এপ্রিল আর ড. শায়কার জন্ম হয়।
শামছুল হকের লেখা –
জননেতা শামছুল হক যদি রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত না হতেন, তবে তিনি নামকরা সাহিত্যিক হতে পারতেন।
গণতন্ত্র, মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা, প্রগতিশীল চেতনা হতো তাঁর সাহিত্যের মূলমন্ত্র।
তাঁর বহুবিধ রচনার মধ্যে আছে ISLAM THE ONLY SOLUTION ‘পাকিস্তান কী, কেন এবং কোন পথে, অপ্রকাশিত ‘রব্বানিয়াত’।
আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম মেনিফেস্টো তাঁর হাতেই লেখা ‘মূল দাবি’।
তার বিখ্যাত বই আজও রাজনীতিকদের মনে দাগ কেটে আছে- সেটি হলো ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম’ দার্শনিক আবুল হাশিম, হযরত আল্লামা আজাদ সোবহানী, মওলানা ভাসানী ও টাঙ্গাইলের করিম উকিল বইটি লিখতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামছুল হকের ভূমিকা –
শামছুল হক ১৯৩৬ সালে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মাধ্যমে।
তিনি যখন করটিয়া সা’দত কলেজের ছাত্র, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বেজে ওঠে।
সে সময় গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ভারতের স্বাধিকার আন্দোলন শুরু করেন।
হিন্দু-মুসলিম যৌথভাবে এ আন্দোলনকে বেগবান করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
আন্দোলন বেগবান করার জন্য তখন কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ নিয়মিত শামছুল হকের কাছে বার্তা পাঠাতেন; আর সে বার্তা অত্যন্ত গোপনে তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন।
ব্রিটিশের কাপড় বর্জন করে হাতে কাটা সুতা দিয়ে খদ্দরের কাপড় পরিধান করতে তিনি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং সফল হন।
এ সময় ব্রিটিশের উপনিবেশগুলো একে একে হিটলারের দখলে চলে যাওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্য টলটলায়মান হয়ে ওঠে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের স্বাধিকার আন্দোলন নতুন দিকে মোড় নেয় এবং শাসছুল হক এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে শামছুল হক –
শামছুল হকের লেখা ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম’ বইটির মাধ্যমে শেখ মুজিবের এরিস্টটল-প্লেটোর মতো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
১৯৪০ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত এই দু’জন ছিলেন একই মুদ্রার দুই পিঠ।
শামছুল হক সাহেবের পাকিস্তান আন্দোলন সম্পর্কে -বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে (২৩৬ পৃ.) বলেছেন, ‘পাকিস্তান আন্দোলনে এক সাহেবের অবদান, যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের চেয়েও অনেক বেশি ছিলো।
বাংলাদেশের যে কয়েকজন কর্ম সর্বস্ব দিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন তাদের মধ্যে শামছুল হক সাহেবকে সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মী বললে বোধ হয় অন্যান্য হবে না ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠানকে জমিদার, নবাবদের দালানের কোঠা থেকে বের করে জনগণের পর্ণকুটিরে যারা নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে হক সাহেব ছিলেন অন্যতম।
অথচ স্বাধীনতার ৭ দিনের মাথাই তিনি মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলেন। একেই বলে মন্দ কপাল। শেষে তাদের কারাগারেই তাকে পাগল হতে হলো।
শামছুল হকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড –
মুসলিম লীগের সর্বভারতীয় নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতো প্রবীণ ও সিনিয়র নেতাদের পরের কাতারে যে তরুণ নেতৃত্ব সর্বোতভাবে সক্রিয় ছিল, তাদের পুরোভাগে ছিলেন এই শামছুল হক।
টাঙ্গাইলের এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী শামছুল হকের মন-মানস জন্মগতভাবেই ছিল দরিদ্র শোষিতদের প্রতি সংবেদনশীল।
নিজের চারপাশের দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত মানুষদের দেখে দেখে শামছুল হকের ভেতরে যে সামাজিক সত্ত্বা জেগে উঠেছিল তাই তাকে প্রতিবাদী ও প্রগতিবাদী রাজনীতির স্রোতে ঠেলে দিয়েছিল।
রাজনৈতিক গগনে তার উত্থান ছিল যেমন দৃষ্টি নন্দন, তেমনি তাঁর অকাল অস্তগমনও আমাদের ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়।
তাঁর নিরুদ্দেশ হওয়া, শেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া, ৪২ বছর পর কবরের সন্ধান লাভ এসবই ভাষা আন্দোলনের একমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের শহীদ হবার করুণ কাহিনী।
এই মহান জননেতা আমাদের ইতিহাসের অত্যন্ত নাজুক, গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটাকীর্ণ অংশের ভারবাহী মহান পুরুষ।
যুগপৎ বাংলা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, প্রগতিবাদী রাজনৈতিক আন্দোলন, গণতান্ত্রিক শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনে এক দশকেরও বেশি সময় ঝড়ো ঈগলের মতো ক্ষিপ্র ও গতিশীল ছিলেন শামছুল হক।
তদানীন্তন পূর্ববাংলার মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থবাদীদের চক্রান্তে টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানীর সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষিত হবার পর ১৯৪৯ সনের ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রথম উপ-নির্বাচনে করটিয়ার জমিদার পুত্র খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি বিজয়ী হন।
এই চক্র নানা প্রকার তালবাহানা করে তুখোড় মুখর ও প্রাণবন্ত নেতা শামছুল হককে একদিনের জন্যেও সংসদে বসতে দেয়নি।
বরং তাকে নানা রাজনৈতিক অভিযোগে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।
ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানের অভিযোগে ১৯৫২ সালের ১৯ মার্চ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শামছুল হকের অসুস্থতার কারণ –
মুসলিম লীগ সরকার অর্থাৎ নূরুল আমীন সরকার তার বিরুদ্ধে কার্যত ত্রিমুখী চক্রান্ত শুরু করে।
এর মধ্যে প্রথমটা হলো কারাগারে রিমান্ডের নামে নির্যাতন, পারিবারিকভাবে তাকে ধ্বংস করে দেবার ঘৃণ্য মিশন এবং আপসহীন উদ্যমী সাংগঠনিক ক্ষমতা সম্পন্ন এই ব্যক্তিকে নিজ দলের মধ্যে নিষ্ক্রিয় করার চক্রান্ত।
নুরুল আমীন সরকার এই ত্রিবিধ চক্রান্তে সফল হয়।
১৯৫৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি যখন ভগ্ন স্বাস্থ্য ভগ্ন হৃদয় নিয়ে কারাগার থেকে বের হন, তখন আগের সেই শামছুল হক আর নেই।
কায়েমি স্বার্থবাদীরা তার মানসিক ভারসাম্য ধ্বংস করে দেয় এবং তার স্ত্রীর নিরূপায়তার সুযোগের কদর্য সদ্ব্যবহার করে সরকারি বৃত্তি দিয়ে প্রথমে নিউজিল্যান্ড পরে আমেরিকা পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রাজনীতির ইতিহাসে প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম শাসকদের এই নোংরামির তুলনা পাওয়া ভার।
১৯৪৭, সময়কালটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
ভারতের মুসলমানরা হিন্দু জুজুর হাত থেকে বেঁচেছে- শামছুল হকরা ১৯৪৬-এর ভোটে বাঙালিদের সামনে যে সোনালী ভবিষ্যতের চিত্রকল্প অংকন করেন, তা এক ঝটকায় শুধু ধূসর নয় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
ইসলামী সাম্যের ‘মুসল্লি’ মসজিদে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত, পশ্চিমাঞ্চলের ঔপনিবেশিক প্রভুদের খয়ের খা আর পদলেহ করা প্রভুর জুতায় পা গলিয়ে পূর্বাঞ্চলকে অবজ্ঞা, শোষণ, নিপীড়ন শুরু করেছে ভাষার উপর করেছে আঘাত।
Great Leader ‘কায়েদে আজম’ নতুনরূপে আবির্ভূত হয়েছে, এই অবস্থায় আবেগের ভেলায় চড়ে যারা ক্ষমতার রাজনীতি শুরু করতে চায় তারা শামছুল হককে সামনে নিয়ে আসলেও তাঁর নিষ্কাম-নির্লোভ-নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম ও মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠায় তার ধর্মীয় বিশ্বাস পছন্দ করতে পারে না।
তারা ধর্ম এবং মানুষ এই দুটি উপকরণকে মনে করে ক্ষমতা দখলের উপযোগ।
অহর্নিশি গণ মানুষের কথা যারা ভাবে তারা যে উপেক্ষিত হবে তা বলাই বাহুল্য। শামছুল হকের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অর্থাৎ মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কার।
যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র –
১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও State বিতর্কে States এর পক্ষে মত প্রকাশ করে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার বীজ বপণ করেন, যা ১৯৭১ সালে পূর্ণতা পায়।
এই সময় তিনি দার্শনিক আবুল হাশিম, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সাথে রাজনৈতিক বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং শেখ মুজিবুর রহমান-এর সহিত পরিচিত হন।
১৯৪৪-১৯৪৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ বিরোধী সংগঠন ‘মুসলিম লীগ কর্মী শিবির’ স্থাপিত হলে এর প্রধান দায়িত্ব তারই উপর বর্তায়।
তিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তাঁর নেতৃত্বে ঢাকার রাজনীতি অর্থাৎ মুসলিম লীগ (জমিদার) খাজাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয় এবং জনগণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
পূর্ববঙ্গের রায়ট বন্ধের প্রতিনিধি দল নিয়ে ১৯৪৬ সালে পাঞ্জাব রায়ট বন্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলে মি. জিন্নাহ তাঁকে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ অর্গানাইজার’ খেতাবে ভূষিত করেন।
এভাবেই তিনি নিজেকে যোগ্য জাতীয় তরুণ নেতা হিসেবে জিন্নাহর নজর কাড়েন। পূর্ববঙ্গের জনগণ তখন তাঁকে ‘বেবি জিন্নাহ’ বলে ডাকতে শুরু করে।
অর্থাৎ তাঁর রাজনীতি তখন মধ্য গগনে, সমসাময়িকরা তখনও উদয়ের পথে।
পাকিস্তান হাসিলের এক সপ্তাহের মাথায় প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, প্রতিবাদী বাঙালি নেতা হওয়ায় মুসলিম লীগ সরকার তাঁকে বহিষ্কার করলে স্বাধীনতার ৩৫ দিনের মাথায় তিনি গঠন করেন গণতান্ত্রিক যুবলীগ এবং ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও গণবিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে গ্রেফতার বরণ করেন।
১৯৪৮ সালে কোলকাতায় আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ – ভাষণ দেন।
১৯৪৮ সালে রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা উর্দু ভাষণের বিরুদ্ধে শামছুল হকের নো-নো প্রতিবাদ।
টাঙ্গাইলের নির্বাচনে শামছুল হকের জয় লাভ –
১৯৪৯-এ আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের প্রি-রিকুইজিট ফ্যাক্টর হচ্ছে শামছুল হকের টাঙ্গাইল উপ-নির্বাচনে জয়লাভ; আর একসাইটিং ফ্যাক্টর হচ্ছে নির্বাচনকে বাতিল করা।
পাকিস্তান হাসিলের পর অগণতান্ত্রিক মুসলিম লীগ সরকার ৩৫টি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে টেস্ট কেস হিসেবে ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল টাঙ্গাইল প্রথম উপ-নির্বাচনের আয়োজন করে।
মুসলিম লীগ সরকার স্বীয় স্বার্থে (পূর্বঘোষিত অযোগ্য) পরাক্রমশালী করটিয়া তথা আটিয়ার জমিদার পুত্র খুররম খান পন্নীকে নমিনেশন দেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক বিরোধী দল জন্ম না নিলেও মুসলিম লীগ সরকার বিরোধী মনোভাবের অন্তঃসলিলা প্রবাহের সক্রিয় নেতৃত্ব ছিল ঢাকার ১৫০নং মোগলটুলীর ‘পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ কর্মী শিবির’।
তরুণ অকুতোভয় বাগ্মী পুরুষ শামছুল হক ছিলেন ঐ শিবিরের প্রধান নেতা।
টাঙ্গাইলের নয়নমণি হিসেবে তিনি সরকার মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হলেন।
অন্য প্রার্থীরা ছিলেন ড. আলীম আল রাজী, আমির আলী খান মোক্তার, নুরুল হুদা ও হোসেন আবদুস সামাদ।
খন্দকার মোস্তাক আহমেদ নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকেন ইয়ার মোহাম্মদ খান, আজিজ আহমেদ শওকত আলী, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, মো. জিল্লুর রহমান (সাবেক রাষ্ট্রপতি), বদিউজ্জামান খান প্রমুখ।
এড. হযরত আলীর পরিচালনায় তরুণ কর্মীবৃন্দ নিজ উদ্যোগে প্রভাবশালী জমিদারের বিপরীতে শামছুল হকের পক্ষে নিরলসভাবে দিনরাত নির্বাচনী প্রচার কাজ করেন।
পূর্ববঙ্গের তৎকালীন চিফ-মিনিস্টার-নূরুল আমীন, শাহ আজিজ, রাজা গজন ফোরারী, আব্দুর রব নিস্তার, মোনায়েম খান প্রমুখের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও খুররম খান পন্নী-সর্বত্যাগী, আদর্শ গণতান্ত্রিক নেতা শামছুল হকের নিকট শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন।
নির্বাচনে জয় লাভের পর –
এরপর জনবিচ্ছিন্ন নূরুল আমিন সরকার বাকি ৩৪টি উপ-নির্বাচন ১৯৫৪ প্রথম ভাগ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে ফ্যাসিস্ট চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
মুসলিম লীগ সরকার একজন প্রার্থীকে (আমির আলী মোক্তার) দিয়ে সদ্য নির্বাচিত আইন পরিষদ সদস্য শামছুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তারা মনে করেন শামছুল হক সদ্যার্জিত পাকিস্তানের জন্য হুমকিস্বরূপ।
উল্লেখ্য, উপ-নির্বাচনে শামছুল হকের প্রতি সমর্থন ও দোয়া কামনায় তখনকার তরুণ রাজনীতিক হযরত আলী সিকদার ও মটুমিয়া টাঙ্গাইল থেকে আসামে যান মওলানা ভাসানীর কাছে।
মওলানা ভাসানী তখন আসামের ধুপড়ী জেলে। জেলখানায় ভাসানী সাহেব সব শুনে শামছুল হকের প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন ও দোয়া জানিয়ে একটি চিঠি দেন।
কিন্তু সেই চিঠিটি জেল কর্তৃপক্ষের দ্বারা সত্যায়িত ছিল না- এই অজুহাতে সরকার শামছুল হকের বিরুদ্ধে লিখিত মামলা দায়ের করে তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে আখ্যা দেন।
এর প্রতিবাদ করতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঢাকায় এলে ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে গৃহবন্দী করেন।
একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বাতিল বলে ঘোষণা করেন।
শামছুল হকের বিজয়ে কারাগারে শেখ মুজিবুর রহমান ও ওলি আহাদকে দারুণভাবে উদ্বেলিত করে এবং রাজনৈতিক মনোবল বৃদ্ধি করে।
ঢাকা মেডিকেলে ডা. সাইদ হায়দার ও ডা. মির্জা মাজহারুলকেও প্রেরণা যোগায়। সারা পাকিস্তানে হৈ-চৈ পড়ে যায়।
৮ মে ১৯৪৯ সালে ঢাকাবাসীর পক্ষে ‘পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ কর্মী শিবির’ আইন পরিষদ সদস্য জননেতা শামছুল হককে ভিক্টোরিয়া পার্কে প্রাণঢালা গণসংবর্ধনা প্রদান করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘ছেলে তুল্য এই শামছুল হকই বাংলার ভাবি প্রধানমন্ত্রী হবে এই ভবিষ্যৎ বাণী করছি।”
শামছুল হকের বক্তৃতা শুনে আফিয়া মুগ্ধ হন এবং ফজিলাতুন্নেছা, প্রিন্সিপাল ইবরাহিম খাঁ, শেরে বাংলা ও কামরুদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে ইডেন কলেজের ইংরেজি শিক্ষিকা আফিয়ার সাথে শামছুল হকের বিয়ে হয় ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯ সালে।
বিয়ের পর –
বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি শ্রেণি অবস্থানের একধাপ উঁচুতে উঠেন বটে কিন্তু তাঁর উচ্চাভিলাসী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাল্টায় না।
শামছুল হক জনগণের নেতা-রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। আফিয়া জনবিচ্ছিন্ন পুরোপুরি মর্ত্যবাসিনী।
আফিয়া শামছুল হককে বলেন “সংগ্রাম করে পাকিস্তান কায়েম করেছো তুমি, এম. এল. এ হয়েছো, কি দরকার বাপু প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে, ভাষা আন্দোলনে মুসলিম লীগ সরকারকে না চটিয়ে তাঁর চেয়ে ভালো অন্যরা যা করছে তাই কর।
তুমি মন্ত্রী হও, আমি স্কলারশীপ নিয়ে আমেরিকা থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে এসে উচ্চ সমাজে সমাসীন হই।”
ফলে জননেতার সাথে ভালোবাসার স্ত্রীর মতের ভিন্নতা পরবর্তীতে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেল।
এর পরের ঘটনাবলী –
জেলখানায় মুসলিম লীগের নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ এবং নিজ দলেও নেই তাঁর নিবিষ্ট ঠাঁই।
ফলে রাজনৈতিক হতাশায় তিনি ফেরিওয়ালার মতো বিচরণ করতে থাকেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
১৯৪৯ সালে টাঙ্গাইল উপ-নির্বাচনে শামছুল হকের বিজয় এদেশের রাজনীতিতে নতুন যাত্রাপথের সূচনা করেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একটি উক্তি এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য- “The Victory of Md. Shamsul Haque in the by election of tangail is great feather of our political gap and we can very well start from here.” শামছুল হকের এই বিজয় মুসলিম লীগ সরকারের উপর অনাস্থাসহ পাকিস্তানের সংহতির মূলেও আঘাত চিহ্ন হিসেবে ছিল সুস্পষ্ট।
তৎকালীন মুসলিম লীগ প্রভাবিত দৈনিক আজাদের সম্পাদকীয়তে বলা হয় “টাঙ্গাইলের পরাজয়কে এক প্রকাণ্ড বিপদ সংকেত বলিয়া সকলকে আজ শপথ গ্রহণ করিতে হইবে।
মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে উত্তোলিত বিদ্রোহের পতাকা একদিন সমগ্র পাকিস্তানকে আচ্ছন্ন করিবে কি-না, মুসলিম লীগ এবং পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন ও বিধ্বস্ত হইবে কি-না একথাও হয়তো এখন হইতেই চিন্তা করিতে হইবে।
শামছুল হকের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিক রাজনৈতিক ই এ অংশটি।
রাজনীতিতে জমিদারের বিরুদ্ধে প্রজার উত্থান এই ঐতিহাসিক ইঙ্গিতটুকু শামছুল হকের বিজয়ের মাধ্যমে অধিকতর সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।”
নির্বাচনে শামছুল হকের বিজয় ১৯৪৯ এর আওয়ামী (মুসলিম) লীগ গঠন, ১৯৪৭ পরবর্তীতে দেশের প্রাধান্য বিস্তারকারী রাজনৈতিক ধারাটির প্রথম ভিত্তি।
এই ধারার বিবর্তিত পরিণতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
প্রখ্যাত সাংবাদিক সানাউল্লাহ নূরীর মতে,“১৯৭১ এর যুদ্ধ শুরুর মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ১৯৪৯ এর উপ-নির্বাচনের বিজয়।”
এটি ছিল প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে বিশাল আঘাত যা আন্তর্জাতিক বিবেককেও আশান্বিত করে তোলে।
সমসাময়িক লন্ডন ডেইলির ভাষ্য – “It is not only a victory of Mr. Shamsul Haque, but it is a threatening to the reactionary govenment of the world over,”
গ্রেপ্তার, কারবাস ও নির্যাতন –
শামছুল হক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য বার বার নির্যাতিত হন এবং ১৯৫২ সালের ১৯ মার্চ গ্রেফতার বরণ করেন।
জেলের ভেতরে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌঁছে।
শোনা যায়, জেলের অভ্যন্তরে তার ওপর বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। এর ফল ফলতে দেরি হয়নি।
জেলের অভ্যন্তরেই তার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।
পাকিস্তান সরকার অবস্থা বেগতিক দেখে ১৯৫৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শামছুল হককে মুক্তি দেন।
কিন্তু মুক্তি পেয়ে শামছুল হক আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি।
রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে উদভ্রান্তের মতো চিকিৎসাবঞ্চিত পূর্ব পাকিস্তানের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়ান।
১৯৬৪ সালের এক বর্ষায় তার পৈতৃক বাড়িতে আসেন, এরপর কেউ আর তাকে দেখেনি; বিস্তৃতির অতলে তলিয়ে যান তিনি।
শামছুল হকের মৃত্যু, অতঃপর –
১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হন এবং দীর্ঘ ৪২ বছর ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন ।
২০০৭ খ্রিস্টাব্দে জানা যায় হক সাহেব ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর – রোজ শনিবার বাদযোহর যোগারচরের বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা মরহুম মৌ. মহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।
মরহুম আনছারীর ছেলেরা পূর্ব পরিচিত অসুস্থ হক সাহেবকে বাড়িতে রেখে সেবা যত্ন চিকিৎসা করান।
৭ দিন চিকিৎসার পর নেতার মৃত্যু হলে জিগাতলার হুকুর শামস উদ্দিন মওলানা কতৃক জানাযা শেষে নেতাকে কদিমহামজানি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পরিবারের পক্ষে ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন, সাংবাদিক মহব্বত হোসেন ও সাংবাদিক মাছুম ফেরদৌসের মাসব্যাপী অনুসন্ধান ডা. আনছার আলীর সহায়তায় বেরিয়ে আসে অমোঘ লুকায়িত সত্যটি।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক-ভারত যুদ্ধ দেশ টালমাটাল উপর্যুপরি আওয়ামী লীগের নেতার মৃত্যু কংগ্রেস নেতা মরহুম মহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে হওয়ায় বিষয়টি গোপন রাখা হয়।
১৯৬২ দৈনিক খ্রিস্টাব্দে ইত্তেফাক পত্রিকায় হক সাহেবের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সাদত কলেজ করটিয়া শামসুল হকের নিজ বাড়ি ঢাকায় আবুল হামিশের নিজ বাড়িতে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে নেতার বিদেহী আত্মার ২ মাগফিরাত কামনা করা হয়।
তিন দিন পর শামসুল হককে টাঙ্গাইলের মাদ্রাসা রোডে হাঁটতে দেখা যায়।
ইত্তেফাক কাগজটি পড়ে শামসুল হক ইত্তেফাক অফিসে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন।
পরের দিন ইত্তেফাক আনন্দ প্রকাশ করে শামসুল হকের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে বিবৃতির কারণেই ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের সঠিক মৃত্যুর সংবাদ শুনেও নেতার পরিবার সংবাদটি বিশ্বাস করতে পারেনি।
ফলে মৃত্যুর সংবাদটি ৪২ বছর পর্যন্ত অগোচরেই রয়ে যায় ৷
টাঙ্গাইলে শামছুল হকের নামে স্থাপনা –
১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে জেলা তোরণের নামকরণ শামসুল হক তোরণ করা হয়।
১৯৭২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম তালুকদার এলেঙ্গায় শামসুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
১০ অক্টোবর ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাসিন ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত সেতুটি শামসুল হক সেতু নামকরণ করেন।
২০০৬ সালে থানাপাড়া টাঙ্গাইলে গরীবের হসপিটাল খ্যাত শামসুল হক মেমোরিয়াল হসপিটাল প্রতিষ্ঠিত হয়; যার প্রচার প্রসারের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে শামসুল হকের কবরের সন্ধান মেলে।
ভাষা আন্দোলনে শামছুল হকের জেলবন্দী অবস্থায় অর্থাৎ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর) হক সাহেব রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের উভয় পর্বের ১৯৪৮ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
পাকিস্তানের সুচনায় বৃটিশ বিরোধী, পরে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, আওয়ামী (মুসলিম) লীগের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস তাকে বিস্মৃত হতে দেবে না যতদিন বাংলাদেশ থাকবে বাঙালি থাকবে।
এখন দরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় ২১ পদক প্রদান পূর্বক একজন শামছুল হকের উত্থান ও সঠিক মৃত্যু রহস্যের উদ্ঘাটন ইতিহাস রচনা করা।
এ কাজটি করবে সমাজের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব তথা সংগঠন যারা শামছুল হকের সুস্থ্য ধারার আদর্শ ও আগের গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রজন্ম থেকে এ প্রজন্মে পৌঁছে দেবে তখন দেশ হবে সন্ত্রাস মুক্ত, শোষণ মুক্ত, আপামর জনগণ থাকবে সুখে শান্তিতে, জাতি পাবে সঠিক নেতৃত্ব। সম্পাদনা – অলক কুমার