নিজস্ব প্রতিবেদক : অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১২ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম বিপাকে পরেছেন বনফুল টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক ও পরিবারের সদস্যরা।
দফায় দফায় ডেভেলপারসকে তাগাদা দিয়েও কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় সমস্যা নিয়েই ফ্লাটে বসবাস শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এরপরও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান না দিয়ে ইতালী পাড়ি জমিয়েছেন ওই বহুতল ভবনের ডেভেলপারস ও ভূমি মালিক।
এতে চরম হতাশা আর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন ফ্লাট মালিকরা।
হুমকিতে রয়েছেন ফ্ল্যাট মালিকদের সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।
অভিযোগ ও ক্ষোভ –
নকশা বর্হিভুত নির্মাণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পাওয়ার স্টেশন স্থাপন, দক্ষিণের নিরাপত্তা দেয়াল, পানি ও গ্যাস সংযোগ, এন্টি থান্ডারিং ও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না দেয়ার মত গুরুতর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ফ্লাট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
টাঙ্গাইল পৌর শহরের সাবালিয়ার ওয়ার্ল্ড ডেভেলপারস লিঃ স্বত্বাধিকারী ও বনফুল টাওয়ারের ডেভেটপারস কাইয়ুম কবিরের বিরুদ্ধে গুরুতর এত অভিযোগ স্বত্ত্বেও কোন পদক্ষেপ নেননি পৌরসভা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
ফ্ল্যাট মালিক সমিতির কথা –
অন্যদিকে চুক্তির শর্ত পূরণের দাবি ও প্রতিবাদ জানানোর ক্ষোভে ভবন পরিচালনায় গঠিত ফ্লাট মালিকদের সংগঠন সুশীল নাগরিক এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষের মানহানিকর তথ্য ও বহিরাগতদের সম্পৃক্ত করে মিছিল, মানববন্ধন পালন করাসহ প্রচার প্রচারণার মত নগ্ন ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত এখন ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী এক ছেলে আর ডেভেলপারস।
এছাড়াও সংগঠণের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সদর পুলিশ ফাঁড়িতে ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী স্ত্রী ফ্ল্যাট কমে দামে কেনার চাপ প্রয়োগসহ দুইটি ফ্লাটের একজন মালিককে ফ্লাটে ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
দাবি আর প্রতিবাদ থেকে দূরে রাখতে সুশীল নাগরিক এসোসিয়েশনের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ ফাঁড়িসহ প্রচার প্রচারণায় মিথ্যা অভিযোগগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বনফুল টাওয়ারের সাধারণ ফ্লাট মালিকরা।
এছাড়াও ল্যান্ডলর্ড আর ডেভেলপারসের যোগসাজসে সাবালিয়া এলাকার বাসিন্দা ও ভবনের দুইটি ফ্লাটের মালিক মিঠু রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংগঠনের সভাপতির ফ্লাটে বহিরাগতদের নিয়ে ভয় দেখানোসহ সাধারণ সম্পাদক উজ্জলের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, চাঁদা না দিলে দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
তাদের দাবি, উজ্জ্বল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিধায় তারা তার উপর চাপ প্রয়োগ করতেছেন।
অল্প দামে ক্রয়কৃত সমস্যায় জর্জরিত ফ্লাট বিক্রি করে আমরা অন্যত্র চলে যাই, সেই ষড়যন্ত্রে মেতেছেন ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী ছেলে মাহবুব উল্লাহ মুন্না আর ডেভেলপারস কাইয়ুম কবির ছোটন বলেও জানান তারা।
নির্যাতন লাঘবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, বিদ্যুৎ বিভাগ আর ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন ফ্লাট নীরিহ মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা অভিযোগগুলো –
অভিযোগে জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ মার্চ টাঙ্গাইল পৌরসভা ১৯ নং ওয়ার্ডের সাবালিয়া মৌজার ১১১ এ.বি.আর নং দাগের ভূমির উপর ৩৫৩৩ বর্গফুট বিশিষ্ট বেসমেনসহ ১০ তলা আবাসিক ইমারত, ল্যাট্রিন, বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণের দাখিতকৃত প্ল্যান অনুমোদনপত্র জারীর পাঁচ বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করাসহ প্ল্যান বাতিলের বেশ কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়।
তবে সরেজমিন আর অভিযোগে জানা গেছে, নির্মাণের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বের নিরাপত্তা দেয়াল, ছাদের নিরাপত্তা বেস্টনি নির্মাণ করেনি ডেভেলপার।
এতে চুরি, ডাকাতিসহ ভবনে বসবাসরত শিশু-কিশোররা চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
নকশা বর্হিভুত সিড়ি, বয়েট ও গেইট নির্মাণসহ ভবনের ছাঁদে সোলার ব্যবস্থা চালু না করে নিয়ম বর্হিভুতভাবে পাওয়ার স্টেশন স্থাপন, নেই গ্যাস ও পানির সংযোগ, বর্জপাতরোধে এন্টি থান্ডারিং স্থাপন না করাসহ রাখা হয়নি জরুরী সেবার অগ্নি নির্বাপক, এ্যাডজাস্ট ফ্যান ও ইন্টার কম সুবিধা।
এছাড়াও নেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক মিটার প্রতি সাড়ে চার হাজার টাকা।
এই ভবনের সকল অসমাপ্ত কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য ডেভেলপারকে চাপ দেয়ায় সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির সদস্যরা বিরাগ ভাজন হয়েছেন ফ্ল্যাট মালিক ও ডেভেলপারের।
তারা ইতিমধ্যেই বহিরাগতদের টাকা দিয়ে কমিটির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার অভিযোগও করেছেন ফ্ল্যাট মালিক সদস্যদের।
ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়াদের কথা –
৬ সি’র ভুক্তভোগী ফ্লাট মালিক গৃহিনী শাহানা বলেন, উজ্জল চক্রবর্তীকে আমরা ফ্লাট মালিকরা ভোট দিয়ে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছি।
তিনি জোর করে কমিটির নেতৃত্বে আসেননি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী আর মাদক ব্যবসার অভিযোগ গুলো ষড়যন্ত্রমূলক।
কেননা উজ্জল তার স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা নিয়ে ওই ফ্লাটেই বসবাস করেন। তাই এই সকল অভিযোগ অবান্তর।
ল্যান্ডলর্ড মরহুম রহমত উল্লাহ্র বিদেশী স্ত্রীর বসবাসরত ৩ এর এ/বি ফ্লাটটি উজ্জল চক্রবর্তী জোর করে কেনার চেষ্টা করছেন এমন কোন অভিযোগ আপনী পেয়েছেন কিনা প্রশ্নে ৩’র সি প্রবাসী মুন্নার ফ্লাটের ভাড়াটিয়া গৃহিনী বলেন, এমন কোন বিষয় আমি শুনিনি।
তবে এর আগে আমি বাড়িতে থাকতে আমার ফ্লাটে বিদ্যুতের সমস্যা হয়েছিল, সেটি সমাধান করে আমার বড় উপকার করেছিলেন টাওয়ার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চক্রবর্তী।
বনফুল টাওয়ারের ফ্লাট মালিক ও অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এস.এম আবু তাহের বলেন, এ ভবনের উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করার কারণে আমরা ২২ জন ফ্লাট মালিক ভোট দিয়ে উজ্জল চক্রবর্তীকে এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছি।
ভবিষ্যতে নির্বাচন হলে ফ্লাট মালিকরা আবারও তাকে নির্বাচিত করবে বলে আমি আশা প্রকাশ করি।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে উঠা মাদক ও নারী ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক।
সাধারণ সম্পাদকের কথা –
টাওয়ার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চক্রবর্তী বলেন, আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় বনফুট টাওয়ারের ল্যান্ডলর্ড এর ছেলে কানাডা প্রবাসী মুন্না আর ডেভেলপারস ছোটন ভবনের নেতৃত্ব থেকে আমাকে সরাতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।
তারা ল্যান্ডলর্ড এর দ্বিতীয় স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান বৃদ্ধাকে দিয়ে উনার বসবাসরত ফ্লাট কম দামে কেনার জন্য চাপ প্রয়োগের মিথ্যা অভিযোগ পুলিশ ফাঁড়িতে দিয়েছেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় বেশ কয়েক স্থানীয় যুবক নিয়ে আমার কাছে বিশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
এই টাওয়ারের দুটি ফ্লাটের মালিক আকবর হোসেন মিঠু ও তার সহযোগী জাহিদ এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করছেন।
চাঁদার টাকা না দিলে আমাকে দেশ ছাড়ার হুমকিও দিয়েছেন মিঠু।
তিনি বলেন, অর্থের যোগান ও প্ররোচনা দিয়ে উনারা এখন আমার মানহানীকর তথ্য পরিবেশন আর বহিরাগতদের সম্পৃক্ত করে মিছিল, মানববন্ধনের নাটক সাজিয়ে মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ওই প্রচার প্রচারনায় বনফুল টাওয়ারের ফ্লাট মালিক মিঠু ব্যতীত কেউ নেই।
সকলে আমার পক্ষে থাকলেও তারা কমিটি বাতিলের চেষ্টা করছেন।
ফ্ল্যাট মালিকদের প্রাপ্য বঞ্চিত করতে এ অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মিঠুর বক্তব্য –
উজ্জল চক্রবর্তীর কাছে বিশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও তাকে দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন আকবর হোসেন মিঠু।
চুক্তি অনুযায়ী সকল কাজই করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভূমি মালিক এর প্রতিনিধি জাহিদ।
ল্যান্ডলর্ডের প্রবাসী ছেলে মাহবুব উল্লাহ মুন্না আর ডেভেলপারস কাইয়ুম কবির ছোটন প্রবাসে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য গ্রহণ করা যায়নি।
পুলিশের বক্তব্য –
টাঙ্গাইল সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, বনফুল টাওয়ারের ল্যান্ডলর্ড মরহুম রহমত উল্লাহ্র বিদেশী স্ত্রী উজ্জল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কম দামে ফ্লাট কেনার জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –
টাঙ্গাইল পৌরসভার নগরপরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদ চুক্তিতে অনুমোদনপ্রাপ্ত বনফুল টাওয়ার নির্মাণ কাজ ১২ বছরে শেষ হয়নি, এ অভিযোগ আপনাদের মাধ্যমে আমি জানতে পারলাম।
ফ্লাট মালিকরা লিখিত অভিযোগ দিলে জরিমানাসহ অনুমোদন বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষে মন্তব্য –
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারি পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভুঞা জানান, সেফটি প্লান ব্যতিত করা সম্ভব নয়। অঅমি সরেজমিন ওই ভবন পরিদর্শক করবেন।
এরপরও লিখিত অভিযোগ পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।