শহিদুলের ১৭ বছরের শিকলাবদ্ধ জীবন; মানবিক সহযোগিতা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই পায়ে পড়ানো লোহার শিকল। লাগানো হয়েছে ২টি তালাও। দিনে গাছের সঙ্গে আর রাতে ঘরের চৌকির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।

আর এভাবেই ১৭ বছর কেটে গেছে মানসিক প্রতিবন্ধী শহিদুল ইসলামের জীবন। ১২ ফুটের শিকলে বাঁধা শহিদুলের বয়স এখন ৩২ বছর।

শহিদুল টাঙ্গাইলের সখীপুরের কাকড়াজান ইউনিয়নের মহানন্দনপুর গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে।

পাঁচ বছর আগে মারা গেছে আজিম উদ্দিন। তারপর থেকে পরিবারটি একদম অসহায় হয়ে পড়ে। এখন তাকে দেখভালের জন্য আছেন শুধু এক ভাই ও মা।

পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, জন্মের কিছুদিন পর হঠাৎ প্রতিবন্ধীর মতো হয়ে পড়ে শহিদুল।

স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক ও কবিরাজ দিয়ে তাকে চিকিৎসাও করালেও সুস্থ হয়নি। ক্রমেই মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির পাশে একটি গাছের সঙ্গে শিকলবন্দি অবস্থায় বেঁধে রাখা হয় শহিদুল ইসলামকে।

মাঝে-মাঝে নজরদারি রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়া হলে স্থানীয় বাজারে সে ঘোরাঘুরি করে।

কেউ কাছে গেলে কোনো কথাই বলে না। আবার কেউ তাকে কটু কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আক্রমণ করে বসে শহিদুল। কেউ তাকে কাছে ডাকলে বা কিছু দিতে চাইলে তা গ্রহণ করে না শহিদুল।

কখনও একা ছেড়ে দিলে হঠাৎ হারিয়ে যায়, আর এই আতঙ্ক থেকে বাঁচার জন্যই তাকে ১৭ বছর যাবৎ শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।

অভাবের সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র উর্পাজনের উৎস। মারা যাওয়ার পর মানুষের সহযোগিতায় কোনো মতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে তার ভাই।

শহিদুলের মা কাজুলী বেগম বলেন, সুযোগ পেলেই এদিক-সেদিক চলে যায়। এজন্য বাধ্য হয়ে পায়ে শিকল পরিয়ে আটকে রাখি।

টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই এই অবস্থায় বাড়িতে রেখে দিছি।

শহিদুলের বড় ভাই আব্দুল্লাহ বলেন, ছোট ভাইকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি; সরকার যদি শহিদুলের চিকিৎসার খরচটা বহন করতো; তাহলে খুব ভালো হতো।

সখিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, মাত্র শুনলাম।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা নেব। সম্পাদনা – অলক কুমার