মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করার নির্দেশনা বাতিল করে অসহায় যাত্রীদের নগরজুড়ে তাণ্ডব চালানো সিএনজি চালকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংস্থাটি বলছে, মিটারে না চালানোর একদফা দাবিতে রাজধানীজুড়ে তাণ্ডব চালানো সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের কাছে নতিস্বীকার করেছে পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এমন অভিযোগ করেন।
যাত্রীকল্যাণ সমিতি অভিযোগ করে বলে, একটি সিন্ডিকেটের নির্দেশে সিএনজি অটোরিকশা খাতকে আলোচনায় রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে বিআরটিএকে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে না চালালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার পুরোনো আইনটি আবারো নতুন করে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার ব্যবস্থা করে।
আইন জারির পর পর কতিপয় সিন্ডিকেটধারী সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা চালকদের উস্কে দিয়ে আজ সকাল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ রেখে নগরজুড়ে তাণ্ডব চালায়। এমন পরিস্থিতিতে বিআরটিএ এই সিন্ডিকেটের কাছে নতিস্বীকার করে অসহায় যাত্রীদের তাণ্ডব চালানো সিএনজি অটোরিকশার চালকদের হাতে তুলে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কাছে বিআরটিএ’র নতিস্বীকার নগরজুড়ে তাণ্ডবকারী চালকদের হাতে অসহায় যাত্রীদের তুলে দেওয়ায় বিআরটিএ’র মতো এমন একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জনগণের টাকায় পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রী অধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত এই সংগঠনটি।
আরো বলা হয়
বিগত সরকারের আমলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩,০০০ করে ২৬ হাজার ৯৯৬টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার রিপ্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তার পরিবারের আশীর্বাদে বিআরটিএ’র কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি, ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, অটোরিকশা উত্তরা মোটরের কিছু ডিলার মিলে এক ভয়াবহ দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। তারা সিএনজি অটোরিকশার রিপ্লেসমেন্ট খাত থেকে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। এদের একেকজন এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। এই কারণে ৩ লাখ টাকার এক একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাম এখন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। তৎকালীন সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পরিবার এইখাতে সরাসরি জড়িত থাকায় তৎসময়ে কেউ টু শব্দ করার সাহস পায়নি।
যাত্রীকল্যাণ সমিতি জানায়, সাবেক সড়কমন্ত্রী আত্মগোপনে চলে গেলেও সিএনজি অটোরিকশা খাতের এই আওয়ামী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিপ্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিআরটিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা গত একদশক ধরে এখনো ঘুরেফিরে ঢাকা-চট্টগ্রামে স্বপদে বহাল রয়েছেন। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে উল্লিখিত দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট নানান আন্দোলনে উস্কে দিচ্ছে। তারা একেকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো মনে করেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী এই সিন্ডিকেটটি বর্তমান সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা, সরকারের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত।
তারা কখনো এক যুগ আগে যাচাই-বাছাইতে বাদ পড়া অস্থিত্বহীন মিশুক অটোরিকশা রিপ্লেসমেন্টের প্রক্রিয়া রাতারাতি বৈধ করে নিতে চায়। আবার কখনো ঢাকা মহানগরীতে ৫,০০০, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪,০০০ চালকের নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাবি নিয়ে, কখনো বিআরটিএ’র সদর কার্যালয় ঘেরাও করে। কখনো সচিবালয়ের সামনে, প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করে।