অস্ট্রেলিয়ায় আগামী ৩ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফেডারেল নির্বাচন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি এবং পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবাসন সংকট ও অভিবাসন প্রবাহের চাপ সামাল দিতে দুই দলই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা জানিয়েছে। দেশটিতে শিক্ষা খাত অভিবাসনের অন্যতম বড় উৎস হিসেবে বিবেচিত।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি প্রায় দ্বিগুণ করে ৭১০ থেকে ১,৬০০ অস্ট্রেলীয় ডলারে নিয়ে গেছে। এবার ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি বলছে, তারা পুনর্নির্বাচিত হলে স্টুডেন্ট ভিসা ফি ২,০০০ অস্ট্রেলীয় ডলার পর্যন্ত করতে চায়। সরকারের হিসাবে, এ পদক্ষেপ থেকে আগামী চার বছরে ৭৬০ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জিম চালমারস এবং বাণিজ্যমন্ত্রী ক্যাটি গ্যালাঘার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্যালাঘার বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি একেবারে যৌক্তিক পদক্ষেপ।’
অন্যদিকে, বিরোধী লিবারেল-ন্যাশনাল জোট আরও কঠোর প্রস্তাব দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (গ্রুপ অব এইট) আবেদনকারীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা ফি সর্বনিম্ন ৫,০০০ অস্ট্রেলীয় ডলারে উন্নীত করা হবে, আর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২,৫০০ অস্ট্রেলীয় ডলার ধার্য হবে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখে। ২০২৫ সালে লেবার পার্টি বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে, আর বিরোধীরা সংখ্যাটি ২ লাখ ৪০ হাজারে সীমিত রাখতে চায়।
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা খাত দেশটির সবচেয়ে বড় রপ্তানি শিল্পগুলোর একটি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাত থেকে ৩ হাজার ৬৪০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার আয় করেছে দেশটি। তবে ক্রমবর্ধমান বিদেশি শিক্ষার্থী ও অভিবাসীর কারণে আবাসন সংকট তীব্র হচ্ছে বলে মনে করছে সরকার। এছাড়া, ভিসা পাওয়ার শর্ত আরও কঠোর করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি ভাষার দক্ষতা ও সঞ্চয় প্রমাণের শর্ত জোরদার করা হয়েছে। এখন শিক্ষার্থী ভিসা পেতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ২৯,৭১০ অস্ট্রেলীয় ডলার জমা থাকতে হবে, যা আগে ছিল ২৪,৫০৫ ডলার।
সবমিলিয়ে বাড়তি ফি ও কঠোর শর্তের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার খরচ এখন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার চেয়ে অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন ফি ১৮৫ মার্কিন ডলার আর কানাডায় ১৫০ কানাডীয় ডলার।অভিবাসন নীতি কড়াকড়ি ও ভিসা ফি বৃদ্ধির ঘোষণা অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন হিসাব-নিকাশ তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।