আজ ভয়াল ১৩ মে, টাঙ্গাইলবাসীর আতঙ্কের দিন

১৯৯৬ সালের ১৩ মে ভয়াবহ টর্নেডোর পর

অতিথি প্রতিবেদক রাইসুল ইসলাম লিটন : ১৯৯৬ সালের ভয়াল ১৩ মে দিন ছিল সোমবার।এই দিনে টাঙ্গাইলের কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল-সখীপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যায় ৫ মিনিট স্থায়ী ভয়াবহ টর্নেডো।

সেই টর্নেডোর ছোবলে জেলায় প্রাণ হারায় ৫২৩ জন আর ৩০ হাজার লোক আহত হয়। মুর্হুতেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় ৪০টি গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৮৫ হাজার ঘর-বাড়ি, ৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৭টি মসজিদ, ১৪টি মন্দির।

ঝড়ে ২০০ একর বোরো জমির পাকা ধান নষ্ট হয়ে যায়। ১০ হাজার গৃহপালিত পশু-পাখি মারা যায়।

সেই দিনের কথা মনে পড়লে ভয়ে আজও আতকে উঠে টাঙ্গাইলবাসী।

আজও স্বজন হারানোদের বোবা কান্নায় ভারি আকাশ-বাতাস। দেখতে দেখতে পা দিল ২৬ বছরে।

এই দিনটিকে স্বরণ করে প্রতি বছর কাঙ্গালী ভোজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন কালিহাতী উপজেলার রামপুর-কোকরাইল গ্রামের স্বজন হারানো পরিবারগুলো।

মসজিদে মসজিদে করা হয় বিশেষ মোনাজাত। আজও দিন ব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে কাঙ্গালী ভোজের।

কি ঘটেছিল সেই দিন –

ওই দিনই বিকাল সোয়া ৫টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা রামপুর- কুকরাইল গ্রামে উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়।

১৯৯৬ সালের ১৩ মে ভয়াবহ টর্নেডোর পর

রামপুর ও কুকরাইল গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ৫ মিনিটের এই ঘূর্ণিঝড়ে দুই গ্রামের একই পরিবারের সাতজনসহ ১০৫ নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত ও ৪ শতাধিক মানুষ আহত হয়।

অনেক ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, গবাদিপশু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও নলকূপের ওপরের অংশ ও দালানের ছাদ পর্যন্ত উঠে যায়।

বস্ত্রহীন ক্ষতবিক্ষত নর-নারীর দেহ, কৃষিজমি, জঙ্গল, পুকুর-ডোবা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে গণকবরে একত্রে দাফন করা হয় ৭৭ জনকে।

গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া গ্রাম থেকে শুরু হওয়া প্রায় ৫ মিনিটের স্থায়ী প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় (টর্নেডো) আলমনগর ইউনিয়ন হয়ে মির্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নুঠুরচর গ্রামে শেষ হয়।

মাত্র ২ মিনিটের ছোবলে গোপালপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়, নিহত হন ১০৪ জন।

বাসাইলের মিরিকপুরে ধান কাটার মৌসুম থাকায় উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ধানকাটা শ্রমিক জড়ো হয়ে ছিলেন এ অঞ্চলে।

ঝড় থেকে রক্ষা পেতে মিরিকপুর-সৈদামপুর ধানের মাঠের আতঙ্ক গ্রস্ত বহু ধান কাটার শ্রমিক মিরিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।

ওই দিন বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা প্রায় ৫ মিনিটের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় (টর্নেডো) এর ছোবলে স্কুল ভবন বিধ্বস্ত হওয়ায় তারা সেখানেই চাপা পড়ে মারা যান ১১ জন।

খবরবাংলা

এলাকার বহু লোক নিখোঁজ হন। পরের দিন তাদের লাশ খোঁজ মেলে পার্শ্ববর্তী নদী, পুকুর, খাল ও বিলে; মৃত মানুষ, গবাদিপশু ও মাছের দুর্গন্ধে বাসাইলের বাতাস ভারি হয়ে গিয়েছিল।

বাসাইল উপজেলার ১৭ গ্রামের ৫ হাজার পরিবারের প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়; তিন হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

তাই আজো কালো মেঘের আনাগোনা দেখলে বাসাইলের মানুষের মনে ভেসে ওঠে মিরিকপুরের সেই ঝড়ের স্মৃতি।

সেই ৫ মিনিটের স্থায়ী প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় (টর্নেডো) টাঙ্গাইল জেলার সবকিছু ধ্বংশ করে দেয়; ঐ সময় বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠন এগিয়ে আসেন।

আজও পঙ্গুত্বকে বরণ করে বেঁচে আছেন অনেকেই। সম্পাদনা – অলক কুমার