আরেক মহামারীর আগে বাদুড়ের ডেরায় ‘ভাইরাস শিকারিরা’

পিটার ডাসজাক বলেন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও চীনে বহু মানুষ নিয়মিতভাবে বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শে আসে। তারা শিকার করে, বাজারে বিক্রি করে, খায়। সে কারণে ওই এলাকাগুলোতে তারা ভাইরাসের খোঁজে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।

২০১৫ সালে চীনের ইউনান প্রদেশের জিনিং কাউন্টির দুটি বাদুড়ের গুহার কাছাকাছি লোকালয়ের বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ডাসজাকের দল দেখতে পায়, তাদের তিন শতাংশের শরীরে এমন ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা সাধারণত বাদুড়ের শরীরে পাওয়া যায়।

“তারা হয়ত নিজের অজান্তেই ওই প্যাথোজেনের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং সেরেও ওঠেন। অথবা তাদের শরীরে হয়ত সংক্রমণের মাত্রা ছিল মৃদু।”

করোনাভাইরাস লাইব্রেরি

বাদুড়ের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করার পর তা তরল নাইট্রোজনে সংরক্ষণ করা হয়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের সহযোগী ল্যাবে গবেষণার জন্য পাঠানো হয় সেই নমুনা।

ডাসজাক বলেন, “আমরা সাধারণত কোনো দেশের সেরা পরীক্ষাগারটি বেছে নিই কাজ করার জন্য। যদি তেমন কিছু না থাকে, তাহলে স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে হয়।”

ল্যাবে সেসব নমুনার জিন বিন্যাস বের করা হয়। তারপর মিলিয়ে দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন পরিচালিত জিনব্যাংকে সংরক্ষিত মানুষ ও নানা প্রাণীর ভাইরাসের সঙ্গে।

ব্যাংককের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির সহযোগী একটি ল্যাবে নতুন রোগ নিয়ে গবেষণায় থাকা সুপাপর্ন ওয়াচারাপ্রুয়েকসাডি বলেন, যদি একটি ভাইরাসের ডিএনএ বিন্যাসে সঙ্গে চেনা ভাইরাসের নমুনার ২০ শতাংশ অমিল থাকে, তাহলে এটি নতুন ধরনের ভাইরাস বলে ধরে নেওয়া হয়।

গত ডিসেম্বরে চীনে যখন নতুন ধরনের নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিল, সেই সময় উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির বিশেষজ্ঞ শি ঝেংলি ওই নমুনার সাথে ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের শনাক্ত করা পাঁচশ নতুন করোনাভাইরাসের নমুনা মিলিয়ে দেখেন।

পিটার ডাসজাক বলেন, ২০১৩ সালে ইউনানের একটি গুহায় পাওয়া হর্সশু প্রজাতির বাদুড়ের শরীরে পাওয়া ভাইরাসের নমুনার সঙ্গে নতুন ওই ভাইরাসের নমুনা মিলে যায় ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ। তখন একে নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস নামে ডাকা শুরু হয়।

“কোনো একটি প্রাণী মধ্যবর্তী পোষকের ভূমিকা নিয়েছিল এই ভাইরাসের মানুষের শরীরে সংক্রমণে। আর এ কারণেই জিনোমে ওই তিন দশমিক ৮ শতাংশ অমিলটুকু ছিল।”

কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী ওই ভাইরাসের উৎস এবং কীভাবে তা মানুষের শরীরে এল- তা জানা বিজ্ঞানীদের জন্য জরুরি।

 

এই ভাইরাস নিজেকে কতটুকু পরিবর্তন করে মানুষকে সংক্রমিত করছে তা বোঝা গেলে আগামীতে নতুন মহামারী রোধ করা যাবে বলে মনে করেন ডাসজাক।

গত বছর জানুয়ারিতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এবং ইকোহেলথ অ্যালায়েন্স মিলে ঘোষণা দেয়, তারা লাইবেরিয়ায় একটি বাদুড় খুঁজে পেয়েছেন যেটি ইবোলার ভাইরাস বহন করছিল।

২০১৩ থেকে ২০১৬ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার প্রাদুর্ভাবে ১১ হাজার মনুষের মৃত্যু হয়েছিল।

গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইকোহেলথ অ্যালায়েন্স এখন সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছে। বনরুই ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী পাচার যে ঝুঁকিপূর্ণ, তা প্রচার করছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বাদুড়ের আধ খাওয়া ফল কখনোই যে কারো খাওয়া ঠিক হবে না, সে কথাও স্থানীয়দের বলছে।