লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় সংরক্ষণের জায়গা সংকটে পড়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার আলু চাষিরা। হিমাগারে জায়গা না থাকায় কৃষকদের আলু সংরক্ষণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চাষিদের অভিযোগ, ধারণক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু সংরক্ষণ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ট্রাক, ট্রলি ও ভ্যানভর্তি আলু নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন কৃষকরা। কেউ আবার অনুমতি না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অথচ রাতের আঁধারে ব্যবসায়ীদের আলু সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
হিমাগারে জায়গা নেই, তবু কৃষকদের ভিড়
হিমাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আলু রাখা সম্ভব নয়। তবে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। এ বছর বাজারে আলুর দাম কম থাকায় চাষিরা বীজ আলুর পাশাপাশি খাওয়ার উপযোগী আলুও সংরক্ষণ করতে চাইছেন, যার ফলে হিমাগারে প্রচণ্ড চাপ পড়েছে।
রবিবার (১৭ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, পাকুন্দিয়ার হিমাগারগুলোর প্রধান ফটক বন্ধ। সড়কের ওপর শতাধিক ট্রাক, ট্রলি ও ভ্যানে আলু নিয়ে অপেক্ষা করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। খরতাপে আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
হিমাগারের ধারণক্ষমতা ও কৃষকদের চাপ
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, পাকুন্দিয়ায় দুটি হিমাগার রয়েছে— পূর্বাচল কোল্ড স্টোরেজ ও এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজ। এ দুটি হিমাগারের সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ১৩,৯০০ মেট্রিক টন। অথচ এ বছর উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত আলু চাষ হওয়ায় মোট উৎপাদন হয়েছে ৩৫,০০০ মেট্রিক টন। ফলে সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষকদের দুর্ভোগ ও হিমাগার কর্তৃপক্ষের অবস্থান
পাকুন্দিয়া পৌরসভার কৃষক মো. তওহিদুল ইসলাম, মোছলেহ উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন জানান, তিন-চারদিন ধরে হিমাগারের সামনে অপেক্ষা করেও তারা আলু সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। হিমাগারের গেট বন্ধ থাকায় শত শত বস্তা আলু নিয়ে ট্রাক ও ভ্যানগাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে।
তবে পূর্বাচল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা ৭০% জায়গা কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। যারা আগে এসে স্লিপ নিয়েছেন, তারাই সংরক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। এখন আর আলু নেওয়ার জায়গা নেই।’
এগারসিন্দুর কোল্ড
স্টোরেজের ম্যানেজার মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা আগেভাগে স্লিপ দিইনি। আগে আসলে আগে পাবেন—এই নিয়মে সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এবার আলু উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকদের চাপ বেড়েছে, যা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই-আলম বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর দেড়গুণ আলু উৎপাদন হয়েছে। ফলে হিমাগারে প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে সব কৃষক অন্তত বীজ আলু সংরক্ষণের সুযোগ পান।’
আলু সংরক্ষণের এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে কৃষকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।