গত বছর ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজছাত্র মো. হৃদয়ের মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তার মরদেহ উদ্ধার হয়নি। শোকাতুর পরিবারের দাবি—তারা অন্তত ছেলের হাড়গোড় ফেরত পেতে চান এবং তাকে শহিদের মর্যাদা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
হৃদয় ছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামের বাসিন্দা ও হেমনগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি গাজীপুরে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ছেলের মৃত্যুতে পরিবার এখন দিশেহারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণের সময় শিল্প পুলিশের গুলিতে হৃদয় নিহত হন। তার মরদেহ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও এখন পর্যন্ত মরদেহের হদিস মেলেনি।
পরিবারের পক্ষ থেকে হৃদয়ের ভগ্নিপতি ইব্রাহিম কোনাবাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলায় সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
পরে ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দায়ীদের শনাক্ত করা হয়। কনস্টেবল আকরামকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হলেও পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। যদিও আদালতের নির্দেশে পরে আবারও তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্তে পুলিশ জানায়, হৃদয়ের মরদেহ গুম করতে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তুরাগ নদীতে ফেলা হয়। গাড়িচালক রহিম এ ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালায়। এখনও পর্যন্ত মরদেহের খোঁজ মেলেনি।
হৃদয়ের মা-বাবা বলেন, “আমরা শুধু আমাদের ছেলের হাড়গোড় ফেরত চাই। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” বোন জেসমিন বলেন, “হৃদয়ের লাশ না পাওয়ায় সে শহিদের মর্যাদা পায়নি। সরকারের কোনো সহযোগিতাও আমরা পাইনি।”
গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।