টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মাদক উদ্ধার অভিযানের নামে নগদ টাকা লুটের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তিন দপ্তরের তিন কর্মচারীকে। তারা হলেন- পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম (পরিচিতি-৩১০৬৮), উপ-পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান (পরিচিতি-৪৯১৫৬), সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান (পরিচিতি-৪৯৩৪৯)।
কিন্তু এই ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদ রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগম।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের অভিযানের নামে নগদ টাকা লুটের অভিযোগ উঠে টাঙ্গাইল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এর কয়েকজন সদস্যদের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে দপ্তর। তারই প্রেক্ষিতে তিনজনকে সাময়িক দরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড এবং ওই মহিলার শরীরে হাত দিয়ে টাকা বের করে নেওয়ার মূল হোতা শামীম আল আজাদ রয়ে যায় অন্তরালে।
কে এই শামীম আল আজাদ –
শামীম আল আজাদের বিষয়ে আরো খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুর শান্তিবাগ এলাকার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে। তিনি বিগত ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিল সেপাহী পদে চাকুরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। শামীম আল আজাদ সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের নিকট আত্মীয়, সম্পর্কে নাতি। তারই হাত ধরে তিনি চাকুরীতে প্রবেশের পর থেকেই নানান অপকর্মে যুক্ত হয়ে পরেন। আর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ ও বিভাগীয় অভিযোগ হলেও কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার প্রমাণ পাওয়া যায়, গত ২৯ জুন তার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়ার পর উপ-পরিচালক আবুল হোসেন তার বদলীর জন্য সুপারিশ করলেও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে টাঙ্গাইলের থেকে যান বহাল তবিয়তে। তিনি ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের অঘোষিত উপ-পরিচালক। আর তার সাথে যুক্ত হয় কুখ্যাত ডিবি হারুনের ভাই জিয়াউর রহমান।
আর এরপর থেকে তিনি হয়ে উঠেন আরো বেপরোয়া। করতে থাকেন একের পর এক অপরাধমূলক কাজ। তিনি ও তার দল এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অপরাধ করলেও পার পেয়ে যান সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের কারণে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত মাদক উদ্ধার করে সেই মাদক বিক্রি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন “খ” অঞ্চলে তার (শামীম) সাথে কাজ করা বেশ কয়েকজন সদস্য। কিন্তু তারা নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।
অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শকের কথা –
এই বিষয়ে জানতে একাধিকবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদের মুঠোফোনে কথা বলেও তিনি এই সকল বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বলেন, আমি কিছু জানি না, মামলা হয়েছে। আপনি আমার টিম লিডার সিরাজ সাহেবের সাথে কথা বলেন।
উপ-পরিচালকের কথা –
এই বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বলেন, টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই এই টিমের সদস্যদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড নজরে আসে। নজরে আসার পর ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর তারিখে শামীম আল আজাদের বদলীর জন্য শামীম আল আজাদ ও প্রদীপ কুমার হালদারের বদলীর জন্য আবেদন পাঠাই। কিন্তু অজানা কারণে তাদের বদলী হয়নি। পরে জানা যায়, শামীম আল আজাদ তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের নিকট আত্মীয়। আর সেজন্যই শত অভিযোগ থাকলেও শামীম আল আজাদ বহাল তবিয়তে টাঙ্গাইলেই রয়ে গেছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৯ জুন মাসেও শামীমের বদলীর জন্য আমি হেড অফিসে চিঠি পাঠাই। কিন্তু তার বদলী হয় না অজানা কারণে। এসময় তিনি আরো বলেন, বদলী না হওয়ার পর শামীম আল আজাদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করে তাকে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ৪র্থ তলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের প্রসিকিউশন শাখায় সাময়িক দায়িত্ব প্রদান করি। কিন্তু তিনি সেখানে তিনি সংযুক্ত হননি। কেন সংযুক্ত হননি, কোন ক্ষমতা বলে তিনি এই আদেশ অমান্য করেন, সেটা আমার জানা নাই। উপরন্তু আমার বদলীর আদেশ হয়।