ফেরদৌস খান বিদ্যুৎ –
গোয়েন্দা দুনিয়ায় তথ্য সংগ্রহ এবং প্রভাব বিস্তারের কৌশলগত দিক গুলো বহুবিধ এবং অনেক সূক্ষ্ম।
এর মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের গোয়েন্দা বা এজেন্ট রয়েছে যাদের কার্যক্রম অত্যন্ত জটিল এবং শক্তিশালী।
এদের বলা হয় “এজেন্ট অফ ইনফ্লুয়েন্স” বা প্রভাব বিস্তারকারী এজেন্ট।
এজেন্ট অফ ইনফ্লুয়েন্স হল এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাকে শত্রু রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন – সমাজের শ্রেণী বিভাজন ও সাবভার্সন : বাংলাদেশে ডিভাইড অ্যান্ড রুলস নীতির কার্যকারিতা
তার উপস্থিতি এবং প্রভাব ধীরে ধীরে এতটাই ব্যাপক হয় যে, সেই দেশ বা জনগণ তার প্রতি অন্ধ বিশ্বাস করতে শুরু করে।
তার সব বয়ান অন্ধভাবে মেনে নেয়। এই ইনফ্লুয়েন্সার এতটা প্রভাব বিস্তার করে যে ধর্মীয় পরিচয়ও অকার্যকর। এমনকি হিন্দু ইনফ্লুয়েন্সার মুসলিম নেতাদের দিয়ে কার্য হাসিল করতে পারে।
এই ধরনের এজেন্ট সাধারণত সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন জনপ্রিয় লেখক, সাংবাদিক বা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে “এজেন্ট অফ ইনফ্লুয়েন্স” হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
প্রথমে সে ওই দেশের জনগণের মধ্যে বিশ্বাস অর্জন করে, এবং পরবর্তীতে তার মাধ্যমে সেই জনগণ বা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য ব্যবহার হয়; এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং দীর্ঘমেয়াদী।
এই এজেন্ট কিভাবে কাজ করে?
“এজেন্ট অফ ইনফ্লুয়েন্স” প্রথমে তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করে এবং ধীরে ধীরে তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে।
ফলে, শত্রু রাষ্ট্র তার পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য এই এজেন্টকে ব্যবহার করে।
তারা এমন সব তথ্য প্রচার করে যা শত্রু রাষ্ট্রের পক্ষে যায়, কিন্তু জনগন ভাবে তার নিজের দেশের হয়েই কাজ করছে।
যা লক্ষণীয়ভাবে ওই দেশের রাজনৈতিক বা সামাজিক ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলে।
আরো পড়ুন – গত ১৫ বছরের সব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় কিউবায় এবং অন্য অনেক দেশে সোভিয়েতপন্থী লেখক, সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ব্যবহার করা হতো।
তারা সোভিয়েত আদর্শকে প্রচার করতেন এবং ধীরে ধীরে ওই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে নিয়ে যেতেন।
এই ধরনের “এজেন্ট অফ ইনফ্লুয়েন্স” শুধু তথ্য সংগ্রহে নয়; বরং একটি গোটা জাতির মনোজগতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
তাদের কার্যক্রম প্রমাণ করে, যুদ্ধ এবং সংঘাত শুধুমাত্র অস্ত্রের মাধ্যমে নয়, বরং মনোজগতের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও জয় করা যায়”।
লেখকের কথা –
আমার এই লেখার কারণ হলো, এমন কিছু এজেন্ট আছে যারা ইউটিউবিং এর মাধ্যমে মানুষের রাজনৈতিক মনোজগতকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
এজেন্ট অফ ইনফ্লুয়েন্স” কিভাবে শত্রু রাষ্ট্রের হয়ে জনগনের মধ্য থেকে কাজ করে তার বর্ননা করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।