কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাট এলাকায় বুধবার দেখা গেছে, নদীর আধা কিলোমিটারজুড়ে নোঙর করা রয়েছে প্রায় ৭০০ মাছ ধরার ট্রলার। ট্রলারে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয় জেলেরা। তাদের মধ্যে নুর হাসান, আবু তৈয়ুব, মো. শফি ও আবদুল কাইয়ুম—চারজনেরই ইলিশ ধরার অভিজ্ঞতা ৮ থেকে ১২ বছর।
জেলারা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগরে ইলিশের হঠাৎ অপ্রাপ্যতা সংসার চালাতে সমস্যা তৈরি করছে। তিন বছর আগে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত। এখন কয়েক দিন ধরে সাগরে নামলেও ১০০–২০০টি ইলিশ পাওয়া দায়। এতে জ্বালানি ও খাদ্যসামগ্রীর খরচ, এবং ইলিশ বিক্রি থেকে আয়ের মধ্যে বড় ফারাক দেখা দেয়।
জেলেদের অভিযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘন ঘন নিম্নচাপ সাগরে ইলিশের অভাবের প্রধান কারণ। মো. শফি বলেন, আড়াই বছর আগে তাঁর ট্রলারে এক ট্রিপে সাত দিনের যাত্রায় ২৫ লাখ টাকার ইলিশ ধরা পড়ত। বর্তমানে এমন আয় আর সম্ভব নয়।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণের ট্রলার রয়েছে ৫ হাজারের বেশি, জেলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। কিন্তু টানা ছয় থেকে সাত মাস ধরে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। তিনি মনে করছেন, দেশি-বিদেশি ট্রলিং জাহাজের আগমন, নিষিদ্ধ জাল ও ঘন ঘন নিম্নচাপ এ পরিস্থিতির মূল কারণ।
মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের তথ্যমতে, ইলিশ আহরণ ক্রমেই কমছে।
-
২০২২–২৩ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ৩,৯৭৫ মেট্রিক টন
-
২০২৩–২৪ অর্থবছরে ২,৫৫৬ মেট্রিক টন
-
২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১,৬২৮ মেট্রিক টন
-
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে আগস্ট পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২৬৭ মেট্রিক টন
মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী জানান, ইলিশ আহরণ কমায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে। জেলায় টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে ইলিশ বিক্রির কয়েকটি কেন্দ্র থাকলেও যথেষ্ট মাছ বিক্রি হচ্ছে না।
জেলার জেলেদের জীবনযাত্রা ও ইলিশ আহরণের এই পরিস্থিতি সমাধানে গবেষণামূলক উদ্যোগ এবং নিয়মিত নকশা নির্ধারণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।