নারায়ণগঞ্জের পোশাক শিল্পে সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে গ্যাস সংকট, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই শিল্পে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত কাজের অভাবে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১৯টি পোশাক কারখানা। এতে করে চাকরি হারিয়েছেন ১ হাজার ৫৭৩ জন শ্রমিক।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার এবং শ্রমিক অসন্তোষও সংকটের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। প্রায় সময় শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবির কারণে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে, ফলে সময়মতো অর্ডার সরবরাহে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেক কারখানার মালিক।
জেলা শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে ৪৪২টি পোশাক কারখানা সচল থাকলেও বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জ জোনের গোয়েন্দা পরিদর্শক সেলিম বাদশা জানান, গ্যাস সংকট ও কাজের অভাব এই সমস্যার মূল কারণ। তবে নতুন কিছু কারখানাও উৎপাদনে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, “আমরা কঠিন সময় পার করছি। গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি আমাদের জন্য অতিরিক্ত চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার
অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু জানান, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত শিল্প খাতের জন্য আত্মঘাতী হবে। তিনি বলেন, এতে শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি বাড়বে এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লাভের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বড় সংকটে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কমতির দিকে। সেই অনুযায়ী আমাদের দেশেও মূল্য সমন্বয় করা উচিত ছিল।”
পোশাক কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে তিনি আর্থিক সংকট, বায়ারের অভাব ও রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন। তার মতে, এই সংকটের কারণে গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জে গত কয়েক মাসে ৯৫টি শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও জানান, গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। গ্যাস বিল দুই মাস বকেয়া থাকলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, যা পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে।
চলমান এই সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্প মালিকরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করে এবং যুক্তিসংগত হারে মূল্য নির্ধারণ করে শিল্প খাতকে বাঁচাতে হবে।