টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র হৃদয় গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিজয় মিছিল থেকে নিখোঁজ হন। পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে শরিফ মেডিকেল হাসপাতালের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এরপর তার নিথর দেহ টেনে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হৃদয়ের মা রেহেনা বেগম আজও ছেলের অপেক্ষায় থাকেন। বাবা লালমিয়া ভ্যান চালিয়ে জীবিকা চালালেও সন্তান হারানোর কষ্টে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। এনজিও ঋণের বোঝা ও অনিশ্চয়তা ঘিরে রেখেছে গোটা পরিবারকে।
হৃদয়ের ভগ্নিপতি মো. ইব্রাহীম কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, পুলিশের ১০-১২ সদস্যের একটি দল হৃদয়কে ঘিরে ধরে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে এবং পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়।
এক বছর পার হলেও এখনো হৃদয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়নি। নিহতের পরিবার কেবল একটি হাড় হলেও ফেরত চায়, যাতে অন্তত বাড়ির উঠোনে সমাধিস্থ করা যায়। এ ঘটনায় পরিবারের কেউই এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ করেন হৃদয়ের বড় বোন জেসমিন আক্তার।
সম্প্রতি গাজীপুরের তুরাগ নদীর কড্ডা ব্রিজ এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তিন কিলোমিটারজুড়ে উদ্ধার অভিযান চালায়। অভিযানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি উত্তরের ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে হৃদয়ের মরদেহ তুরাগ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
হৃদয়ের মা-বাবা বলেন, “আমরা শুধু আমাদের ছেলের হাড়গোড় ফেরত চাই। যারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের ফাঁসি চাই।”