গোপালপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে এক কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে মির্জাপুর ইউনিয়নের কাগুজিআটা মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে কাগুজিআটা, মোহনপুর, নুঠুরচর, মির্জাপুরসহ কয়েকটি গ্রামের নারী-পুরুষসহ সহস্রাধিক গ্রামবাসী অংশ নেন।
সাবেক ব্যাংকার আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শেখ রাসেল, লাকি আখতার, শেখ ফরিদ, ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক, ইউপি সদস্য আবুল হানিফ প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, ২০১৩ সালে কাগুজিআটা গ্রামের মৃত আনছের আলীর কন্যা বিথী খাতুনের সাথে একই গ্রামের মৃত আ. সালামের পুত্র শফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়।
দাম্পত্য কলহের জের ধরে গত মার্চ মাসে মৌখিক তালাকে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
এমতাবস্থায় শফিকুলের সাথে ঘাটাইল উপজেলার রৌহা গ্রামের এক যুবতীর বিয়ে ঠিক হয়।
গত (২০ অক্টোবর) বুধবার এ বিয়ে হবার কথা ছিল।
কিন্তু বিয়ের দুদিন আগে গত সোমবার বিকালে বিথী প্রাক্তন স্বামী শফিকুলের বাড়িতে যান।
বাড়ির লোকজন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিথীকে ঘরে উঠতে বাঁধা দেন। এসময় তাদের ঝগড়া বেঁধে যায়।
ঝগড়ার এক পর্যায়ে বিথী শারিরীকভাবে লাঞ্জিত হন।
পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় সন্ধ্যা সাতটার পর তাকে একটি ইজিবাইকে তুলে বাবার বাড়ি নিয়ে মায়ের হেফাজতে দেয়া হয়।
গ্রামবাসী ও বাদির বক্তব্য –
এবিষয়ে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হানিফ মিয়া জানান, গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ রাত দশটা পর্যন্ত বিথীদের বাড়িতে তালাক ও পুনঃবিবাহ নিয়ে সালিশ করেন।
সালিশের একটি ভিডিও করা হয়। রাত হয়ে যাওয়ায় সালিশ অমিমাংশিত রাখা হয়।
রাত দশটার পর গ্রামবাসীরা যার যার বাড়িতে চলে আসেন।
পরদিন কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টেলিভিশন চ্যানেলের খবর থেকে গ্রামবাসী জানতে পারেন, আগের দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিথী অপহরণ এবং ধর্ষিত হন।
গ্রামের সাবেক ব্যাংকার আশরাফ আলী, কবীর হোসেন, আমজাদ আলী, আব্দুর রশীদ, রুবী বেগম ও হোসেন আলী জানান, কাবিন ছাড়া বাল্য বিয়ে, খোরপোষ ছাড়াই তিন তালাক প্রদান এবং শফিকুলের দ্বিতীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে এ বানোয়াট গণধর্ষণের মামলা হয়।
এতে শফিকুলের পরিবারের আপন দুই চাচা ও তিন ভাতিজাকে আসামী করে গত মঙ্গলবার গোপালপুর থানায় গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন মা তাছলিমা বেগম।
গ্রামবাসিরা এ বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার, ভুল তথ্য দিয়ে এক শ্রেণীর মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করে অপপ্রচার এবং নিরীহ মানুষকে হয়রানীর পায়তারা বন্ধের দাবি জানান।
তবে মামলার বাদী তাছলিমা বেগম জানান, শফিকুলের সাথে তার কন্যা বিথীর কোন বিয়ে হয়নি।
ওই দিন সন্ধ্যায় শফিকুলের বাড়িতেও সে যায়নি।
মোহনপুর বাজার থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ব্রীজপার থেকে আসামীরা তাকে অপহরণ করে এবং বাড়িতে নিয়ে রাতভর গণধর্ষণ করেন।
বিথী এখন টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
পরশু দিন তার মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি পাঁচজনকে আসামী করে গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমণ আইনে মামলা করেছেন।
ধর্ষকরা সবাই ছাত্রলীগ করেন বলে জানান তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান এবং থানার ওসির বক্তব্য –
মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদার জানান, ওই দিন রাত দশটায় গ্রামবাসি তাকে জানান, ওই দম্পতির তালাক ও পুনঃবিয়ে নিয়ে তাছলিমা বেগমের বাড়িতে বিথীর উপস্থিতিতে সালিশী বৈঠক করার খবর তাকে জানানো হয়।
পরদিন বিষয়টি মিমাংসা করার কথা।
কিন্তু পরদিন সকালে অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টেলিভিশন চ্যালেনের খবরে জানতে পারেন বিথী গণর্ধষণের শিকার হয়েছেন।
খবরটি শুনে তিনি অবাক হয়েছেন।
গোপালপুর থানার ওসি মোশাররফ হোসেন জানান, ভিক্টিমের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার মা তাছলিমা বেগম বাদী হয়ে গত ২০ অক্টোবর থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন।
পুলিশ অভিযোগের সত্যতা নিয়ে তদন্ত করছেন।
মেডিক্যাল রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা এটি গণধর্ষণ কিনা।
গ্রামবাসীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, সবকিছু মাথায় নিয়েই তদন্ত হচ্ছে।
২-৩ দিনের মধ্যেই বিষয়টি পরিস্কার হবে বলেও জানান তিনি।