টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের সদুল্যাপুর গ্রামের মিতালী সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিনশ গ্রাহকের ছয় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পুরো গ্রাম জুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এদিকে সর্বস্ব নিঃস্ব হয়ে গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তবে সমিতির কর্তৃপক্ষ এর দায় একে অপরের উপর চাপিয়ে দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জানা যায়, সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ (সংশোধিত আইন ২০০২), (সংশোধিত আইন ২০১৩) এর ১৮ (২) (ক) ধারার বিধান মোতাবেক ২০১৪ সালের ১১ মার্চ তৎকালীন জেলা সমবায় কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি বিশ্বাস সদুল্যাপুরের মিতালী সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের নিবন্ধন দেন। সে সময় মিতালী কর্তৃপক্ষ সমিতিটির ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি তালিকাও জমা দেন সমবায় কার্যালয়ে। এতে সভাপতি ছিলেন মো. তোফাজ্জল হোসেন বাবু, সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন বাবু, কোষাধ্যক্ষ খালেকুজ্জামান, সদস্য শান্ত চন্দ্র সরকার ও মো. রফিকুল ইসলাম। কয়েক বছর পর সদস্য শান্ত সরকারকে সমিতির সহ-সভাপতি করা হয়। সমিতিটির কার্যক্রম কয়েক বছর ভালোভাবেই চলছিল।
এরই মধ্যে এনায়েতপুর এলাকার আব্দুর রশীদের ছেলে সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বাবু এবং সদুল্যাপুরের এনামুল হোসেন বাবু কৌশলে সমিতির প্রায় ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করেন। এছাড়া একেক জনের নামে বেনামে রয়েছে তিন থেকে চারটি হারভেস্টার মেশিন। যার আনুমানিক মুল্য দেড় কোটি টাকা। এছাড়া শান্তর বাসায় গিয়েও দেখা যায় তারও রয়েছে দুইটি হারভেস্টার।
কয়েকজনের অভিযোগ সমিতির টাকা আত্মসাৎ করেই তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন একেক জন। তবে শান্তর পরিবারের দাবি সমিতির টাকা তোফাজ্জল হোসেন বাবু ও এনামুল হোসেন বাবু দুইজনে মিলেই আত্মসাৎ করেছেন।
ভেতরের ঘটনা –
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর সমিতিটির টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ খালেকুজ্জামান সমিতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। তবে অব্যাহতির সময় তাদের কাছ থোক কোন হিসাব বুঝে রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সমিতিটির অডিট করেও টাকা আত্মসাতের প্রমান পায় অডিট কর্মকর্তা। সেই সময় টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তোফাজ্জল হোসেন বাবু ৭৯ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকারও করেন।
এখন গ্রাহকদের চাপে পড়ে সমিতির কর্তৃপক্ষ একে অপরের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। তোফাজ্জল হোসেন বাবু ও এনামুল হোসেন বাবুর দাবি টাকা শান্ত আত্মসাত করেছেন। আবার শান্ত ও তার পরিবারের দাবি টাকা দুই বাবু টাকা আত্মসাৎ করে শান্তর উপর দায় চাপানো হচ্ছে। এ কারণে দুই বাবু শান্তকে প্রাননাশের ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে শান্ত পলাতক রয়েছে। এ নিয়ে দফায় দফায় শালিশ বৈঠক হলেও শান্ত উপস্থিত না থাকায় এর কোন সুরাহা হয়নি। এরই মধ্যে সমিতির ৯৬ জন গ্রাহক কে-কার কাছ থেকে টাকা ফেরত নিবেন এ নিয়ে একটি তালিকাও করেছেন তোফাজ্জল হোসেন বাবু ও এনামুল হোসেন বাবু। এর মধ্যে তোফাজ্জল হোসেন বাবু দিবেন ৩২ জনের এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা ৯৫ হাজার ৩৩৫ টাকা, এনামুল হোসেন বাবু ৩২ জনের এবং শান্ত সরকার দিবেন ৩২ জনের টাকা। এদিকে গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
গ্রাহকদের বক্তব্য –
এনায়েতপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী হাসান জানান, অনেক কষ্টের জমানো দফায় দফায় ৪৫ লাখ টাকা মিতালী সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে তোফাজ্জল হোসেন বাবু ও এনামুল হোসেন বাবুর হাতে তুলে দেন। এখন তিনি নিঃস্ব। শিবপুরের রনি ৩৭ লাখ টাকা, সদুল্যাপুরের ছানোয়ার হোসেন আট লাখ টাকা, প্রদীপ আট লাখ টাকা, শান্তর ছোট ভাই বিপ্লব ২০ লাখ টাকা সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে জমা রাখেন। তবে এখন তারা সবাই নিঃস্ব। এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি তোফজ্জাল হোসেন বাবু বলেন, আমরা ৯৬ জন গ্রাহককে ৩২ জন করে তিনটি ভাবে ভাগ করেছি। আমার ভাগে ৩২ জন গ্রাহককে রাখা হয়েছে।
এই ৩২ জনকে মোট এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা ৯৫ হাজার ৩৩৫ টাকা দিতে হবে। এছাড়া এনামুল হোসেন বাবু ও শান্ত চন্দ্র সরকারের কাছেও ৩২ জন করে গ্রাহককে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত দুই পরিচালকের বক্তব্য –
এনামুল হোসেন বাবু বলেন, শান্ত পলাতক থাকায় এ নিয়ে কোন সুরাহা হয়নি। তবে আমরা তিনজনে কিছু কিছু টাকা দিয়ে সমিতিটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শান্ত পলাতক থাকায় তাও করা যাচ্ছে না।