টাঙ্গাইল জেল প্রশাসকের গাড়ি চালক ঝন্টু চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক জেলা প্রশাসক আতাউল গণির সময়ে বিষয়টি প্রথম নজরে আসে বলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। তবে বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পরও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা যায়, জেলা প্রশাসকের গাড়ি চালক ঝন্টু চক্রবর্তী সাবেক জেলা প্রশাসক আতাউল গণি সময় চালক ঝন্টু চক্রবর্তীর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা প্রথম নজরে আসে জেলা প্রশাসক কর্তৃপক্ষের। ঘটনার দিন ঝন্টু চক্রবর্তী জেলা প্রশাসকের গাড়ি (টাঙ্গাইল-ঘ-১১-০০৫৫) নিয়ে টাঙ্গাইল পতিতালয় থেকে একজন পতিতাকে ওই গাড়িতে উঠিয়ে রওনা হন। এসময় এনডিসি জেলা প্রশাসকের দেহরক্ষীকে ফোন করে জানতে চায় যে, জেলা প্রশাসকের ওই গাড়িটি সার্কিট হাউজে আছে কিনা, জানতে চায়। দেহরক্ষী তখন সার্কিট হাউজে গিয়ে গাড়িটি দেখতে না পেয়ে এনডিসিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তখন এনডিসি জেলা প্রশাসকের দেহরক্ষীকে নির্দেশ দেন গাড়ি চালক ঝন্টু চক্রবর্তীকে ফোন দিয়ে গাড়ি সার্কিট হাউজে নিয়ে আসার জন্য। সেসময় কর্তব্যরত জেলা প্রশাসকের দেহরক্ষী সেই মোতাবেক ঝন্টুকে ফোন দিলে তিনি গাড়ি নিয়ে সার্কিট হাউজে ফিরে আসেন। জেলা প্রশাসকের গাড়িতে একজন পতিতকে নিয়ে ঝন্টু চক্রবর্তী নিরালা মোড় পার হওয়ার সময় বিষয়টি টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়রের গাড়ি চালক সুলতানও দেখেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ওই দিন গাড়ি চালক ঝন্টু চক্রবর্তী বিজয়া দশমীর ছুটিতে ছিলেন এবং ছুটি থাকাকালীন সময়ে তিনি জেলা প্রশাসকের গাড়ি নিয়ে এই কাজ করেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ঝন্টু চক্রবর্তী বিভিন্ন সময় টাঙ্গাইল পতিতালয় ও সার্কিট হাউজে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের (হিজরা) নিয়েও নানান অনৈতিক কর্মকাÐ করে চলেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বেশ কয়েকজন গার্ড ও কর্মচারী। যার বেশ কিছু ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। ভিডিওতে তৃতীয় লিঙ্গের ওই ব্যক্তির কথা শুনে বোঝা যায় সেসময় ঝন্টুর সাথে তার আরও একজন সহকর্মী ছিল। ওই সহকর্মী তার সহযোগী ও একই চরিত্রের বলে ধারণা করা যায়। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায় নি।
এই বিষয়গুলো টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের একধিক গাড়ি চালকের সাথে কথা বললে তারা সরাসরি ঘটনাটি স্বীকার না করলেও তাদের কথায় ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
গাড়ি চালক বুলবুল মোল্লা বলেন, ঘটনাটি আমার মনে নাই। ৩-৪ বছর আগের ঘটনা তো। অপর গাড়ি চালক শামীম বলেন, এরকম একটি ঘটনা ৩-৪ বছর আগে শুনেছিলাম।
ঘটনা সম্পর্কে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়রের গাড়ি চালক সুলতান বলেন, ঘটনার দিন আমি ডিউটি শেষ করে নিরালা মোড়ে রাস্তা পাড় হচ্ছিলাম। এমন সময় জেলা প্রশাসকের গাড়ির সামনের সিটে ওই ধরনের একজন মহিলাকে দেখতে পাই। এসময় তিনি বলেন, এই গাড়ি থামিয়ে তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না, উনি কে? এছাড়া গাড়িতে আর কেউ ছিলো কিনা তা জানি না।
এবিষয়ে অভিযুক্ত গাড়ি চালক ঝন্টু চক্রবর্তী ঘটনাকে প্রথমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বললেও পরে ভিডিও দেখে “ভুল মানুষই করে” বলে মন্তব্য করেন।
বিষয়টি নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঘটনাটি অনেক দিন আগের, তারপরও যেহেতু আমাদের নজরে এসেছে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে ঘটনাটি জেলা প্রশাসনকে অবগত করার পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই? জানতে তাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।