বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা এখন অর্ধশত। রাজপথে প্রত্যেকের আলাদা মঞ্চ থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের বিভক্তি কমে যায়। ২ থেকে ৩টি জোটবদ্ধ ব্যানারেই জাতীয় নির্বাচনে দেখা যায় বেশিরভাগ দলকে। সামনে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সেই ধারা চলমান থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
নির্বাচন কমিশন বলছে, জোটের স্বাধীনতা সবার। তবে, ভোটারের কাছে প্রার্থীর পরিচয় হতে হবে নিজ দলের প্রতীকে। সে লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন প্রস্তাব করলে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। ফলে এখন থেকে জোট থেকেই প্রার্থী ভোটে লড়লেও মার্কা হতে হবে নিজ দলের।
তবে, এর পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। প্রত্যেক দলের আলাদা আদর্শ ও প্রতিশ্রুতি থাকে। জোটের সবাই এক প্রতীক ব্যবহার মানে ভোটারদের সাথে প্রতারণা করা; আবার, একে দলের পছন্দের বিষয় উল্লেখ করে জোটের প্রতীক নির্ধারণ ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের থাকা উচিৎ বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খানের মতে, জোটবদ্ধ দলগুলোর দলভিত্তিক আলাদা প্রতীক না হলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হবে। জোটের বড় দলের যে ইশতেহার তা অন্য দলের না-ও থাকতে পারে। তবুও তারা জোটবদ্ধ হওয়ায় সেই দলের মার্কা ব্যবহার করবে। তারা যখন সংসদে যাবে, তখন যদি সেই প্রতীকের মূলদলের সঙ্গে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হয় তখন তারা কী করবে— এমন শঙ্কাও থাকে।
মূলত, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় নির্বাচনে জোটের একক প্রতীক ব্যবহারের কীর্তি আছে অন্য দলের শীর্ষ কিছু নেতার ক্ষেত্রেও। এর আগে, জোটের প্রার্থীরা একে অন্যের প্রতীক ব্যবহার করতে পারতেন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠেয় নবম জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। একইভাবে, ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচনে দাঁড়ান ধানের শীষ প্রতীকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদের মতে প্রতীক নির্ধারণে প্রার্থীর স্বাধীনতা থাকা উচিত। কারণ সব দলের সাংগঠনিক শক্তি একই রকম নয়।
বিশ্লেষকদের মতে,
ভোটাররা এখনও প্রার্থীর চেয়ে প্রতীকে নির্ভর। তাই জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে বড় দলের প্রতীকে ভর করতে চান প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে ভোটার সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। কেবল মার্কা নয় প্রার্থীর যোগ্যতা-সক্ষমতা বিবেচনা করার পরামর্শ তাদের।
ছোট দলগুলোর রাজনৈতিক বিকাশেও এর প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করে মুনিরা খান বলেন, বট গাছের নিচে ছোট গাছ যেমন কোনদিন বড় হতে পারে না, এটিও অনেকটা সেরকমই। বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সেই প্রতীক নিয়ে কোনোভাবে সংসদে যাওয়া আর নিজের দলকে প্রতিষ্ঠিত করা ভিন্ন কাজ।
দল ছোট হলেও স্বকীয়তা বজায় রেখে বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে আসাকেই ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।
ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, জোটবদ্ধ ভোটের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভোটারদের প্রার্থী পছন্দও ভিন্ন আবহে রূপ নিতে পারে। তৃণমূলের কর্মীরা মনে করতেই পারে, প্রতীক থাকা স্বত্ত্বেও জোটের প্রার্থীকে তারা ভোট দেবে না। সেখানে যদি বিদ্রোহী প্রার্থীর আবির্ভাব ঘটে তখন পরিস্থিতি আরও অন্যরকম হতে পারে।
প্রসঙ্গত, জোট শরিকদের ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকের সুপারিশ করেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। জোটের একটি প্রতীকে নির্বাচনে অংশে নেয়ার পাশাপাশি জোটবদ্ধ হয়েও দলীয় প্রতীক ব্যবহারের ঘটনা অতীতে দেখা গেছে।











