টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ঐতিহ্যবাহী গুজা বিলকে ঘিরে চলছে অবৈধ দখলের অভিযোগ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্ষার মৌসুমে মাছ ধরাই ছিল এ এলাকার শতাধিক দরিদ্র মৎস্যজীবী পরিবারের একমাত্র জীবিকা। অথচ সম্প্রতি প্রভাবশালী একাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী ও তাদের ঘনিষ্ঠরা সরকারি খাস জমি ইজারার আড়ালে শত শত একর ব্যক্তিমালিকানা জমিও নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে মাছ চাষে বাঁধ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফলদা ইউনিয়নের গুজা বিলে প্রবেশ ও বের হওয়ার খালের মুখে বাঁধ দেয়ায় বর্ষার পানি আটকে গেছে। এতে বিলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ধান চাষও হুমকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলদা গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, “ছোটবেলা থেকে এই বিলে মাছ ধরে সংসার চালাই। এখন যেভাবে দখল চলছে, তাতে কাল থেকে আর মাছ ধরতে পারবো না। জলাশয়টিকে আগের মতো উন্মুক্ত রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।”
এ বিষয়ে উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি রঞ্জু মণ্ডল বলেন, “এখন একটি প্রভাবশালী মহল খালে বাঁধ দিয়ে পুরো জলাশয় দখলের চেষ্টা করছে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।”জানা গেছে, গুজা বিলে মাত্র ২৪ একর খাস জমি রয়েছে, যা সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইজারার নামে আশপাশের প্রায় ২০০ একর ব্যক্তি মালিকানার নিচু জমিও মাছ চাষে ব্যবহার হচ্ছে।
ইজারাদারদের মধ্যে ভূঞাপুর পৌর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা দাবি করেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ম মেনেই ৬ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে এবং প্রতি বছর সরকারকে রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, খাস জমির বাইরে ব্যক্তি মালিকানা অংশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিমা আক্তার জানান, “ইজারাদাররা ইজারাকৃত অংশে মাছের নিরাপত্তার জন্য বাঁধ দিতে পারে। তবে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে কোনো অবৈধ বাঁধ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্টদের সাথে চুক্তি করতে হবে। এ নিয়ে অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে গুজা বিলকে উন্মুক্ত রাখা এবং প্রভাবশালীদের অবৈধ বাঁধ অপসারণে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। অন্যথায় এ অঞ্চলের শতাধিক দরিদ্র পরিবার জীবিকা সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।