বাংলার গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাখিদের মধ্যে জলময়ূর বা ‘পানির রাজকন্যা’ এক অনন্য সৌন্দর্যের প্রতীক। ইংরেজিতে ‘Pheasant-tailed Jacana’ নামে পরিচিত এই জলজ পাখিটি বিল-ঝিলের শান্ত জলে প্রকৃতিকে করে তোলে আরও জীবন্ত ও রহস্যময়। অনেকে একে ভালোবেসে ‘লতাপাদপের রানী’ বলেও ডাকেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের রানাদহ বিলে এখনো জলময়ূরের দেখা মেলে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জলময়ূরের繁殖কাল। এ সময়ে বিভিন্ন বিল-ঝিল, খাল-বিল ও জলাশয়ে কচুরিপানা, শাপলা, পদ্মফুল আর ঘন জলজ উদ্ভিদের মধ্যে জলময়ূরের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে।
বড় শাপলাপাতা বা পদ্মপাতার ওপর শুকনো ঘাস ও আগাছা দিয়ে জলময়ূর বাসা বানায়। আশ্চর্যের বিষয়, স্ত্রী পাখি ৪টি ডিম পেড়ে দায়িত্ব শেষ করে দেয়, আর পুরুষ পাখি একাই ২৫ দিন ধরে ডিমে তা দিয়ে ছানা ফুটায়। ছানারা জন্মের পরপরই হাঁটতে ও সাঁতার কাটতে পারে, দেড় মাস বয়সে শিখে যায় উড়তে।
পাখি গবেষক ও ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার কামাল হোসেন জানান, জলময়ূর এখনো বিপন্ন পাখির তালিকায় না থাকলেও এর সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। জলময়ূরের জীবনকাল ৪ থেকে ৫ বছর। এদের খাবারে থাকে জলজ উদ্ভিদের কচিপাতা, গুলা, বীজ, পোকা, শুককীট ইত্যাদি।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই পাখির সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। জলাভূমি রক্ষা ও জনসচেতনতা ছাড়া পানির রাজকন্যা হারিয়ে যেতে পারে প্রকৃতির বুক থেকে। তাই প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জলময়ূর বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।