নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের রসুলপুরের বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অনিল কুমার দাস ও তার স্ত্রী কল্পনা রানী দাসের হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (১৩ সেপ্টম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল-১ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এই রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, নিহত শিক্ষক অনিল কুমার দাসের বৈমাত্রেয় ভাই স্বপন কুমার দাস (৪৫), খোকন ভূইয়া (৪৮), ফরহাদ হোসেন (৩৮), শয়ান (৪০) মঞ্জুরুল ইসলাম মিঞ্জু (৩৩) ও জাহিদ।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই রাতের কোনো এক সময় অনিল কুমার দাস ও তার স্ত্রী কল্পনা রানী দাসকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধ হত্যা করে।
পরে তাদের গলায় ইটের বস্তা বেঁধে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের খোলা ক‚পে ফেলে রেখে যায়।
পরদিন দুপুরে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।
পরে ২৭ জুলাই নিহতের ছেলে নির্মল কুমার দাস বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই সময় টাঙ্গাইলের নবাগত পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় টাঙ্গাইলে সদ্য যোগদান করেছেন।
তখন থেকেই চাঞ্চল্যকর এই জোড়া হত্যার প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত শুরু করেন।
১২ মে ডিবি থেকে মামলাটি স্থানান্তর করে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউর রহমানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
এ ছাড়া পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।
ওই কমিটি ১২ মে এই শিক্ষক দম্পতি হত্যার জড়িত থাকার অভিযোগে রসুলপুরের আবদুস ছালামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম এবং হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ফরহাদকে আটক করে।
পুলিশ তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে ১৩ মে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রুপম কুমার দাসের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এই হত্যাকাণ্ডে তারা ছয়জন অংশ নেয়।
এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া রসুলপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩২) এবং পার্শ্ববর্তী শালিনা গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. ফরহাদ (৩৩) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় তার সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, গত ১২ মে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে জাহিদুল ও ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিক্ষক অনিল কুমার দাস ও তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
পরদিন ১৩ মে তাদের বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।
তারা বিচারিক হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রূপম কুমার দাস তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।
পুলিশ সুপার জানান, জবানবন্দিতে জাহিদুল ও ফরহাদ জানিয়েছেন, শিক্ষক অনিল কুমার দাসের পাছবিক্রমহাটি মৌজার ৬০ শতাংশ জমি লিখে নেওয়ার জন্য তার বৈমাত্রেয় ছোট ভাই স্বপন কুমার দাস স্ট্যাম্প প্রস্তুত করেন।
এই স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য স্বপন ওই এলাকার জাহিদ, ফরহাদ, খোকন ভূইয়া (৪৮) ও মঞ্জুরুল ইসলাম মিঞ্জুর (৩৩) সঙ্গে আলোচনা করেন।
স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে পারলে স্বপন তাদের নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং জমি বিক্রির পর অর্ধেক মূল্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ঘটনার দিন স্বপন তার পাঁচ সহযোগীসহ শিক্ষক অনিল কুমার দাসের ঘরে ঢোকেন। তারা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য অনিল কুমার দাসকে চাপ দেন।
কিন্তু তিনি স্বাক্ষর করতে রাজি না হওয়ায় স্বপন বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যাকরেন।
এ সময় জাহিদ, ফরহাদ, খোকন ও মিঞ্জু অনিল কুমার দাসের হাত-পা চেপে ধরেছিলেন।
এ ঘটনা দেখে ফেলায় অনিল কুমার দাসের স্ত্রী কল্পনা রানী দাসকেও একইভাবে হত্যা করা হয়।
পরে তাদের দুজনের মরদেহের সঙ্গে ইট বেঁধে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় জড়িত খোকন ভূইয়া ও মঞ্জুরুল ইসলাম মিঞ্জুকে গত ১৪ মে পুলিশ গ্রেফতার করে।
তাদের দুজনকে পরদিন আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, স্বপন কুমার দাসসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সুপার জানান, মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন টাঙ্গাইল সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান।
চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের জন্য একটি সহায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আহাদুজ্জামানকে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পরিদর্শক শ্যামল দত্ত, উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমান, উপ সহকারী পরিদর্শক হাফিজুর রহমান এবং কনস্টেবল শামসুজ্জামান।
নিহতের ছেলে এ মামলার বাদী নির্মল কুমার দাস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।