টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তারাবাড়ী গ্রামের ভ্যান চালকের মেয়ের (১৪) সাথে পাশের ব্রাহ্মণকুশিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সাথে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রসুলপুরের জামাই মেলায় পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রধরে প্রেম ও ঘনিষ্ঠতা এবং এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ওই কিশোরী অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়ে। স্থানীয় পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় গত ৮ নভেম্বর (শুক্রবার) অবৈধ মেলামেশার সময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে। পরে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে গালা ইউনিয়ন কাজী আ. হাইয়ের মাধ্যমে দুই লাখ এক টাকা দেনমোহরানায় কাবিনমূলে গভীর রাতে বিয়ে দেয়া হয়।
বিয়ের পর ওই রাতেই প্রেমিক নাহিদুল ইসলাম পরিবারের সাথে বাড়ি চলে যায়। বিয়ের পাঁচদিন পর গত ১৩ নভেম্বর (বুধবার) টাঙ্গাইল পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের কাজী হজরত আলীর মাধ্যমে নাহিদুল ইসলাম (১৮) ওই কিশোরীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাকের নোটিশ পেয়ে অসহায় অন্তঃস্বত্তা কিশোরী ও তার হতদরিদ্র পরিবারে ঘোর অমানিষা নেমে আসে।
ওই কিশোরী জানায়, আল্লাহ-রসুলকে সাক্ষী রেখে আমাকে বিয়ে করবে বলে নাহিদ তাকে বার বার ধর্ষণ করেছে। এখন আমার পেটে নাহিদের সন্তান। আমি ছয় মাসের গর্ভবতী। গর্ভবতী হওয়ায় নাহিদ নিজের ইচ্ছায়ই আমাকে বিয়ে করে। কিন্তু পরিবারের চাপে সে আমাকে তালাকের নোটিশ দিয়েছে।
কিশোরীর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে তিনি অতিকষ্টে সংসারের ঘানি টানছি। অন্তঃস্বত্তা মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কী করমু?
তালাকের নোটিশ দেয়ার পর তিনি টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। দুই দফায় পুলিশ এলাকায় গিয়ে তদন্ত করলেও মামলাটি এখনো এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হয়নি।
স্থানীয় সাবেক পুলিশ কনস্টেবল সুরুজ্জামান জানান, পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র। মানবিক কারণে তিনি ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ন্যায় বিচারের স্বার্থে মেয়েটিকে যে ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করব।
নাহিদের আত্মীয় ও কান্দুলিয়া গ্রামের মাতব্বর সিদ্দিক হোসেন জানান, আমি বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলাম। কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে তালাকের নোটিশ দেয়া সঠিক হয়নি। আমি কোন বেআইনী কাজকে কোনদিন সমর্থন করিনি, এটাও করব না।
নাহিদের মা মোছা. নাছিমা আক্তার প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে জানান, বিয়ের পর মেয়েটি গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তালাকের নোটিশ দেয়া হয়েছে। তার ছেলের বয়স কম তাই ভুল করেছে।
গালা ইউনিয়নের কাজী (বিয়ে/তালাক রেজিস্টার) আ. হাই জানান, উভয় পরিবারের লোকজন এসে অনুরোধ করায় তিনি বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন। মেয়ের বয়স প্রমাণের সুযোগ পাননি। তিনি আরো জানান, এ ধরণের বিয়ে তিনি আগেও রেজিস্ট্রি করেছেন। কোন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হলে ডিআরের (জেলা রেজিস্টার) মাধ্যমে তিনি মোকাবেলা করবেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের কাজী হজরত আলী জানান, বিবাহিত পুরুষের যৌক্তিক কারণে তালাক দেয়ার অধিকার রয়েছে। একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে নাহিদ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে তিনি ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ (১) উপধারায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ প্রদান করেছেন। এটা তালাক নয়, নোটিশ।
টাঙ্গাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, কিশোরীকে ধর্ষণের বিষয়টি বিয়ে করে নাহিদুল ইসলাম বৈধ করেছে। তালাক দেয়ার পর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।