টাঙ্গাইলে রোপা আমন ধান চাষে এবার সাফল্য ধরা দিয়েছে। ভালো বীজ, আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বিঘাপ্রতি ২ থেকে ৪ মণ ধানের বেশি ফলন হচ্ছে। এই সাফল্যে কৃষকদের আনন্দ পরিবার এবং পাড়া-গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তারা বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়ার জন্য আশাবাদী।
অগ্রহায়নের শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় উৎপাদনের প্রায় ৬৩ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ধান কাটার পর মাড়াইয়ের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় রোপা আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ দুই হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকারি প্রণোদনা এবং উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহারের ফলে এ বছর এক লাখ ৪ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। ফলনও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৪০৫ হেক্টর, বাসাইলে ৩৯২ হেক্টর, কালিহাতীতে ৮ হাজার ৪৬৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ১৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর, নাগরপুরে ৩ হাজার ২০১ হেক্টর, মির্জাপুরে ৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর, মধুপুরে ১৩ হাজার ২ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৬ হাজার ১০৫ হেক্টর, গোপালপুরে ১৩ হাজার হেক্টর, সখীপুরে ১৭ হাজার ২৬৫ হেক্টর, দেলদুয়ারে ৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর এবং ধনবাড়ীতে ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে।
ক্ষেত্রপর্যায়ে কৃষকরা আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। কালিহাতীর সহদেবপুর ইউনিয়নের দিগর গ্রামে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকরা ব্যস্ত। অনেক কৃষক হাতে ধান কেটে মেশিনে মাড়াই করছেন। নতুন ধানের স্তুপ ইতোমধ্যেই উঠানে জমতে শুরু করেছে।
কৃষকরা জানান,
বিগত বছরগুলোতে বিঘা প্রতি ১৪-১৬ মণ ধান ফলন হতো। এ বছর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং ভালো বীজ ব্যবহারের কারণে বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ ধান পাচ্ছেন। তারা আশা করছেন বাজারে ধানের দাম ভালো হলে মৌসুমে লাভবান হবেন। তবে যদি বাজারের দাম কম হয়, তবে ধান চাষের আগ্রহ কমে যেতে পারে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ ও বীজ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি থাকায় এবার রোপা আমন ধান লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জেলার এক লাখ ৪ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৬২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। ধান কাটার পাশাপাশি মাড়াইয়ের কাজও দ্রুত চলছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। রোগবালাই কম থাকায় সব ধানেরই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে জেলায় রোপা আমন ধান কাটা শেষ হবে।











