টাঙ্গাইল জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ১ হাজার ২৭৭টি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৮৩১টি প্রধান শিক্ষক এবং ৪৪৬টি সহকারী শিক্ষকের পদ খালি। নিয়োগ ও পদোন্নতিসহ নানা জটিলতায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। ভুক্তভোগীরা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ৬২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদে ঘাটাইল উপজেলায় ১৭২ জনের মধ্যে ১০৩ জন, সখীপুরে ১৪৭ জনের মধ্যে ৩৪ জন, গোপালপুরে ১৬১ জনের মধ্যে ১২০ জন, বাসাইলে ৭৯ জনের মধ্যে ২৭ জন, সদর উপজেলায় ১৬৩ জনের মধ্যে ৬৬ জন, দেলদুয়ারে ১০০ জনের মধ্যে ৬২ জন, মির্জাপুরে ১৭০ জনের মধ্যে ৪২ জন, কালিহাতীতে ১৭০ জনের মধ্যে ১১৪ জন, মধুপুরে ১১০ জনের মধ্যে ৬৩ জন, নাগরপুরে ১৫৬ জনের মধ্যে ৯৭ জন, ভূঞাপুরে ১১০ জনের মধ্যে ৬৯ জন এবং ধনবাড়ীতে ৮৫ জনের মধ্যে ৩৪ জন প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ সংখ্যা ৯ হাজার ৬০টি। এর মধ্যে ঘাটাইলে ৫৯টি, সখীপুরে ১৮টি, গোপালপুরে ৬২টি, বাসাইলে ৯টি, সদর উপজেলায় ৩৫টি, দেলদুয়ারে ৪১টি, মির্জাপুরে ২৯টি, কালিহাতীতে ৬৫টি, মধুপুরে ১৭টি, নাগরপুরে ৫১টি, ভূঞাপুরে ৪৬টি এবং ধনবাড়ীতে ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৬১৪ জন সহকারী শিক্ষক।
ঘাটাইল উপজেলার খাজনাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) নাসির উদ্দিন জানান, ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০৭ জন। শিক্ষক পদ ৫টি হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন। একজনকে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হওয়ায় অন্যজনের পক্ষে সব শ্রেণির পাঠদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে এবং অনেক শিক্ষার্থী অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। বিষয়টির দ্রুত সমাধান দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশিরুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষককে সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০টি ক্লাস নিতে হয়। শিক্ষক সংকটে অনেককে ৩৫ থেকে ৪০টি ক্লাস নিতে হয়। ফলে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষণ কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীর শিখন নিশ্চিত করা যায় না। প্রান্তিক শিক্ষার্থীরাই বেশি ভুক্তভোগী। দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।
টাঙ্গাইল সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা জাহান বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এবং আজকের শিশুরাই ভবিষ্যৎ। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ জরুরি। কেউ যাতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বিশেষ করে প্রান্তিক এবং দুর্গম অঞ্চলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সংযুক্তির মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শূন্য পদ পূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মঠ ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ পূরণ করা যেতে পারে।