নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক প্রাপ্ত প্রবীণ রাজনীতিবিদ ফজলুর রহমান খান ফারুক (৮০) আর নেই। ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য, টাঙ্গাইল-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের থানাপাড়া নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলার মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ফজলুর রহমান খান ফারুক দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। পরে শনিবার সকালে তার কোন সাড়া শব্দ না পেলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ফারুকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িতে জেলার বিভিন্নস্তরের মানুষ ভিড় করেন। তবে সেখানে নিজ দলের কোনো নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। এমন কি তার ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভও রয়েছেন পলাতক।
ফজলুর রহমান ফারুক ১২ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ওয়ার্শী ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে জন্মগ্রহণ। আব্দুল হালিম খান ও মা ইয়াকুতুন্নেছা খানমের আট সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাষ্টার্স পাস করেন। তার স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। তিনি এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক।
ফারুক ১৯৬০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের গণ পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ৬ দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে টাঙ্গাইল জেলা বাকশাল এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের ১৭ আক্টাবর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়ে ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শেখ হাসিনা সরকার তাকে ২০২১ সালে একুশে পদক প্রদান করেন।