খবরবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দল শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ালো।
আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের তফসিল বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার আদেশ চেয়ে পাঁচজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম।
আজ বুধবার টাঙ্গাইল সদর জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে তিনি এ মামলা করেন।
বিষয়টি আমলে নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবাদীরা হলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আহমেদ আজম খান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক হাসানুজ্জামিল ও সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার নথি পেয়েছেন তাঁরা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলেছেন আদালত।
মামলার বাদী সম্মেলনের প্রার্থী, প্রস্তাবক, সমর্থক কিছুই না। ৩০ অক্টোবর আদালত শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তাঁরা আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মামলার আবেদনে বাদী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটির সম্মেলনে ভোটার তালিকা প্রস্তুতের বিধান আছে।
কিন্তু টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সম্মেলন সামনে রেখে খসড়া ভোটার তালিকা করা হয়নি। কার্যালয়েও তালিকা টাঙানো হয়নি।
খসড়া তালিকার ওপর বাছাই বা আপত্তি গ্রহণ করা হয়নি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনো ভোটার তালিকা প্রস্তুত না করে ২১ অক্টোবর সম্মেলনের তফসিল ঘোষণা করেন।
১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের সভাপতি পদে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ছাইদুল হক, আহবায়ক কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হাসানুজ্জামিল ও সদস্য আলী ইমাম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ফরহাদ ইকবাল ও সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু।
অভিযোগ :
দেওয়ান শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সম্মেলনের তফসিল অনুযায়ী ২২ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বিক্রি, ২৩ অক্টোবর মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও ২৪ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করা হয়।
মনোনয়নপত্র বিক্রির সময় ভোটার তালিকা বিতরণের কথা থাকলেও কোনো প্রার্থীকে সেটা দেওয়া হয়নি।
সভাপতি প্রার্থী আলী ইমাম তপন ২৩ অক্টোবর ভোটার তালিকার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদন করেন।
কিন্তু আজও তাঁকে তালিকা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আগামী ১ নভেম্বর সম্মেলন হলে তা প্রহসনে পরিণত হবে।
বাদী ওই সম্মেলনের তফসিল বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার আদেশ চান।
নেতৃবৃন্দের বক্তব্য :
সম্মেলনের সভাপতি প্রার্থী ছাইদুল হক বলেন, প্রার্থীদের ভোটার তালিকা না দেওয়া ও সম্মেলনের জায়গা নিয়ে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
একজন সভাপতি প্রার্থীর বাড়ির কাছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সম্মেলনের স্থান ঠিক করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনে তিনি পুনরায় সম্মেলনের তারিখ, উপকমিটি পুনর্গঠন ও জায়গা পরিবর্তনের জন্য তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক হাসানুজ্জামিল বলেন, দলের কতিপয় নেতা ১ নভেম্বরের সম্মেলনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেবেন তাঁরা।
আদালতে কাগজপত্র দাখিলের পর রায় তাঁদের পক্ষে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য :
গত বছরের ৪ নভেম্বর আহমেদ আযম খানকে আহবায়ক ও মাহমুদুল হক সানুকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি গঠনের পর আহবায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে দুটি ধারা তৈরি হয়।
গত ৩ আগস্ট পুরোনো আহবায়ক কমিটি ভেঙে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র; ওই কমিটিতেও আহমেদ আযম খানকে পুনরায় আহ্বায়ক করা হয়।
কিন্তু সদস্য সচিবসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বাদ পড়লে বিরোধ শুরু হয়।
আহমেদ আযম খান বিরোধীরা সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ছাইদুল হক ও সদস্য সচিব মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। সূত্র – প্রথম আলো, সম্পাদনা – অলক কুমার