টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সম্মেলনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

তের বছর পর আজ টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সম্মেলন

অলক কুমার : দীর্ঘ প্রায় তের বছর পর আজ টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ সম্মেলনে কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ত্যাগী ও যোগ্যদের তাদের আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচিত করার সুযোগ পেয়েছে।

আর বিষয়টিকে দলের ভেতরে গনতন্ত্র চর্চার একটি উদাহারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

পৌর এলাকার পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়ায় ঈদগাঁ মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলন সভাপতি পদে পদে তিনজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দুই হাজার তিনশ’ ৪৬ জন কাউন্সিলর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করবেন।

এদিক দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর পর জেলা বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বইছে নেতাকর্মীদের মাঝে।

প্রতিটি উপজেলায় প্রার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন কাউন্সিলরদের সমর্থন পেতে।

জেলার সর্বত্র বিএনপির সম্মেলন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।

কারা হতে যাচ্ছেন বিএনপির আগামী নেতা? তা নিয়ে নানা বিশ্লেষন চলছে দলের তৃনমৃল নেতাকর্মীদের মাঝে।

সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা বিএনপির আহবায়ক টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভা করেন।

এ সময় তিনি গনতান্ত্রিক পরিবেশে জেলা বিএনপির সম্মেলন দলের জন্যে একটি মাইল ফলক বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান গনতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন।

জেলা বিএনপির সম্মেলন সফল করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন আহমেদ আযম।

জেলা বিএনপির কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

একতরফা ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না কাউন্সিলররা।

যারা ত্যাগী ও যোগ্য, যাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুনাবলী রয়েছে কাউন্সিলররা তাদেরকে নির্বাচিত করবেন বলে ধারনা করছেন তারা।

নানা বাঁধা বিপত্তির উপেক্ষা করে বিএনপির সম্মেলন এক সফল পরিনতির দিকে যাচ্ছে বলে ধারণা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের।

এর আগে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিপন জানান, সম্মেলনের তফসিল অনুযায়ী ২২ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বিক্রি, ২৩ অক্টোবর মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও ২৪ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রত্যাহার ও চ‚ড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করা হয়।

ঘটনাক্রম :

উল্লেখ্য গত বছরের ৪ নভেম্বর আহমেদ আযম খানকে আহ্বায়ক ও মাহমুদুল হককে সদস্যসচিব করে জেলা বিএনপির ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে দুটি ধারা তৈরি হয়।

গত ৩ আগস্ট পুরোনো আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র ওই কমিটিতেও আহমেদ আযম খানকে পুনরায় আহ্বায়ক করা হয়।

কিন্তু সদস্য সচিবসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বাদ পড়লে বিরোধ শুরু হয়।

আহমেদ আযম খান বিরোধীরা সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ছাইদুল হক ও সদস্য সচিব মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে থাকেন।

আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে হঠাৎ সাংবাদিকদের কাছে কদর বেড়েছে বিএনপির

দলীয় সুত্রে জানা :

১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে মেজর জেনারেল (অবঃ) মাহমুদুল হাসানকে সভাপতি ও মনিরুজ্জামান বুলবুলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

এক পর্যায়ে মনিরুজ্জামান বুলবুলের সাথে মাহমুদুল হাসানের দ্বন্দ চরমে পৌছে। তাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়।

এক পর্যায়ে ২০০৯ সালের ২১ জুন এডভোকেট আহমেদ আযমকে আহবায়ক ও কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফাকে সাধারণ সম্পাদক করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

২০১১ সালে তারাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তারাও বেশীদিন এক থাকতে পারেন নি।

এ দুই নেতার দ্বন্দ্বে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও বহিস্কারের ঘটনাও ঘটে।

২০২১ সালে এডভোকেট আহমেদ আযম খানকে আহবায়ক ও মাহমুদুল হাসান সানুকে সদস্য সচিব করা হয়।

উপজেলা কমিটি গঠন করতে গিয়ে তারাও বিভক্ত হয়ে পড়েন।

কয়েক মাসের মাথায় এডভোকেট আহমেদ আযম খানকে আহবায়ক করে পুনরায় আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে বাদ পড়েন মাহমুদুল হক সানুসহ অন্যান্য নেতৃবন্দ।

এই দ্বন্দ্ব উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু দলীয় কর্মসুচি চলমান রাখার ঘোষণা দেন।

গত ২৩ আগস্ট আশরাফ পাহেলীকে সভাপতি ও নুরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে শহর বিএনপি ও শফিকুর রহমান খান শফিককে সভাপতি ও আজহারুল ইসলাম লাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করে।

এদিকে গত ১১ অক্টোবর সম্মেলনের মাধ্যমে মেহেদী হাসান আলিমকে সভাপতি ও ইজাজুল হক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে টাঙ্গাইল শহর বিএনপি ও আজগর আলীকে সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপি গঠন করা হয়।

উপজেলা পর্যায়ের চিত্র :

মধুপুরেও শহর ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠিত হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপনের নেতৃত্বাধীন নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন পদ পেলেও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরকার সহিদের অংশ বঞ্চিত হয়েছেন।

ধনবাড়ী উপজেলা ও পৌর বিএনপির অবস্থাও একই।

মির্জাপুরের সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে মির্জাপুর উপজেলা কমিটি গঠিত হলেও সাঈদ সোহরাব, ফিরোজ হায়দারের অনুসারীরা বাদ পড়েন।

আরো পড়ুন – ভূঞাপুরে গভীর রাতে বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রশ্ন চুরি করতে গিয়ে ছাত্রী আটক

ঘাটাইলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান আজাদের নেতৃত্বাধীন অংশকে বঞ্চিত করে বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ওবায়দুল হক নাসিরের নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কালিহাতীতে লুৎফর রহমান মতিনের নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীদের সাথে বিএনপির ঢাকা বিভাগী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটুর দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে।

একদিকে সাবেক সভাপতি শুকুর মাহমুদ অপরদিকে আরেক সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম শোভা গ্রুপিং লবিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

এছাড়া বাসাইল, সখীপুর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, গোপালপুর ও ভূঞাপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ থাকলেও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়নি।