রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর ঢালাওভাবে কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের বোনাস দেওয়ার ভিত্তি পরিচালন মুনাফা নয়, বরং নিট মুনাফা হবে।
নতুন নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, মুনাফা অর্জনের পর প্রথমে সরকারকে লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি সরকারকে লভ্যাংশ না দেওয়া হয়, তাহলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনোভাবে বোনাস দাবি করতে পারবে না।
গত ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ব্যাংকের মূলধন ১০% এর নিচে হলে বা প্রভিশন লস হলে কোনো ডিভিডেন্ড বা বোনাস দেওয়া হবে না।
ননপারফর্মিং লোন সংক্রান্ত নিয়ম
যেসব ঋণ তিন মাসের বেশি সময় ধরে অনাদায়ি থাকবে, সেগুলোকে ননপারফর্মিং লোন (NPL) হিসেবে ধরা হবে। গভর্নর জানান, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং ব্যালেন্স অব পেমেন্ট উন্নত করতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। রেমিট্যান্স ২১% বৃদ্ধি এবং রপ্তানির উন্নতি এর পেছনের প্রধান কারণ।
নতুন নির্দেশিকার মূল বিষয়
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতোমধ্যেই ১৪টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বোনাস প্রদানের শর্তাবলি সংক্রান্ত খসড়া তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণ ও অগ্রিমের প্রভিশন, বিনিয়োগে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন এবং অন্যান্য সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করতে হবে। এই নির্দেশিকা ২০২৪ সালের উৎসাহ বোনাসের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।
সাধারণ নিয়মাবলী:
-
অতিরিক্ত কোনো বোনাস দিতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
-
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের (সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) বোনাস পাঁচটি কর্মসম্পাদন সূচকের ওপর নির্ভর করবে:
-
চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার
-
আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির হার
-
ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধির হার
-
খেলাপি ঋণ আদায়ের হার
-
অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার
-
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে নিট মুনাফার হারে, যা ৫০ নম্বরের বেশি। নম্বর অনুযায়ী সর্বাধিক তিনটি বোনাস দেয়া হবে।
বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম
-
ছয়টি বিশেষায়িত ব্যাংক: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক
-
চারটি সূচক: নিট মুনাফার হার, ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ আদায়, অবলোপন করা ঋণ আদায়
-
আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির সূচক বাদ
-
-
আইসিবি: পুঁজিবাজারে লেনদেন বৃদ্ধির হার, নিট মুনাফা, লভ্যাংশ ও খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য পৃথক নম্বর
-
বিএইচবিএফসি: ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের বিপরীতে প্রকৃত আদায়ের হার, নিট মুনাফা, খেলাপি ঋণ আদায় এবং ঋণ ও অগ্রিম বৃদ্ধির নম্বর নির্ধারিত
অর্থাৎ নতুন নীতিমালা নিশ্চিত করবে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বোনাস প্রদান যথাযথ, স্বচ্ছ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।











