ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন নেত্রকোনার কিশোরী আঁখি। শেরে-ই-বাংলা সরকারি কলেজের ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হবেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন আঁখি। এখন সেই স্বপ্ন হারিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন একা।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ঢাকায় আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশি হামলায় আঘাত পান ঠোঁট, দাঁত, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে। কাজ হারান, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। চোখের চিকিৎসা, শরীরের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজন ছিল অর্থ, যা তার কাছে ছিল না। বর্তমানে তিনি ঢাকার রামপুরায় বৃদ্ধ নানির সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আঁখি জানান, আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে শুধু পুলিশের নির্যাতন নয়, স্থানীয়ভাবে হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। তারপরও থেমে থাকেননি। শহীদ মিনার, শাহবাগ, লং মার্চ—সবখানেই ছিলেন সক্রিয়।
চরম আর্থিক সংকটে থাকা সত্ত্বেও এখনও আহত জুলাই যোদ্ধাদের সরকারি তালিকায় তার নাম নেই। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি নিজে, পাশাপাশি স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরাও।
কেন্দুয়ার মানবাধিকারকর্মী শাহ আলী তৌফিক রিপন বলেন, “আঁখির নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়া একটি প্রজন্মের আত্মত্যাগ ও প্রতিবাদের প্রতি অবজ্ঞা। এখনই সময় তার ন্যায্য স্বীকৃতি দেওয়ার।”
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার জানিয়েছেন, আঁখির সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
আঁখি বলেন, “আমি এখনও আশা করি, অন্তত কেউ একজন বলবেন—তুমি যা করেছ, তা মূল্যবান।” তার কণ্ঠে হতাশা নয়, বরং লড়াই করে বাঁচার অদম্য প্রত্যয়।
একজন সাহসী তরুণীর নাম যেন হারিয়ে না যায় ইতিহাসের পাতায়—এটাই আজ সচেতনদের একমাত্র প্রত্যাশা।