সৌদি আরবের সরকার গত তিন দিনে মোট ১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। সোমবার (৪ আগস্ট) ‘সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত অপরাধের’ দায়ে দুই সৌদি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে শনিবার ও রবিবার আরও ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যাদের বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিক এবং মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা Saudi Press Agency (SPA)। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ২০২২ সালের মার্চের পর সবচেয়ে দ্রুত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। ওই বছর একদিনেই ৮১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
শনিবার ও রবিবার যারা মৃত্যুদণ্ড পান, তাদের মধ্যে ১৩ জন হাশিশ পাচারে, একজন কোকেন পাচারে এবং একজন সন্ত্রাসবাদে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
সৌদি আরব বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম মৃত্যুদণ্ডপ্রয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ২৩৯টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা ২০২৪ সালের মোট ৩৩৮টি মৃত্যুদণ্ডকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এটি গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থা Reprieve-এর প্রতিনিধিত্বকারী জিদ বাসিউনি বলেছেন, “হাশিশ-সম্পর্কিত মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এবং এতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত বেশি। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশ গাঁজা বা হাশিশ ব্যবহারে শিথিলতা আনছে, সৌদি আরব সেখানে আরও কঠোর হচ্ছে—যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা বাড়ায়।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৩ সালে সৌদি সরকার যে ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করেছিল, তার ধারাবাহিক ফলাফল এখন দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা হলেও ২০২২ সালের শেষ দিকে আবার চালু করা হয়।
সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, “সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং এটি সমাজে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মাদক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।” তবে মানবাধিকারকর্মীদের মতে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ সংস্কার পরিকল্পনার সঙ্গে এই মৃত্যুদণ্ডের বিপরীতমুখী প্রবণতা সৌদি আরবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে।