রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরের সেতুরক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার এলাকা ধসে গেছে। এতে বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। কয়েকদিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি ইতিমধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সেতু ও সংলগ্ন রংপুর–লালমনিরহাট মহাসড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা প্রায় ৩০ লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকালে দেখা যায়, ৯০০ মিটার দীর্ঘ সেতুরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে স্রোতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। বাঁধের নিচের মাটি ধুয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে এবং বাকি অংশও ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাচ্ছে। তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, আর ব্যারাজ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিপুরে তিস্তার ওপর দ্বিতীয় সড়ক সেতু নির্মাণ করে। এটি রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ করেছে। কিন্তু ভাঙন নিয়ন্ত্রণে না আনা হলে সেতু ও সংলগ্ন সড়ক মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় ইউনিয়নগুলোতে নিম্নাঞ্চল, চর এবং দ্বীপচরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বহু পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। মহিপুর এলাকার মকবুল হোসেন জানান, “গত দুই বারের বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের বড় অংশ ধসে বিশাল গর্ত হয়েছে। তিন গ্রামের এক হাজারের বেশি পরিবার ও সেতু ঝুঁকির মুখে।”
স্থানীয় প্রশাসকরা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জরুরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, “ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার উজান থেকে পানি দ্রুত নেমে আসায় রংপুর অঞ্চলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
স্থানীয়দের দাবি, সাময়িক সহায়তা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্রুত নিতে হবে যাতে সেতু ও সংলগ্ন সড়ক ও পরিবারগুলো সুরক্ষিত থাকে।