টাঙ্গাইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) দেশের একটি মডেল প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও এখানে শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা এবং দক্ষ প্রশিক্ষণের অব্যবস্থাপনার কারণে অগ্নিদগ্ধ মত ঘটনায় ব্যাপক সামলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর বিকাল ৫টায় টাঙ্গাইল মডেল টিটিসি এর অটোমোটিভ মেকানিক্স ট্রেডে শিক্ষকদের গাফিলতিতে অগ্নিদগ্ধ হয় ৫ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর এবং ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। গুরুতর ২ জনের ১ জনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছে, অপরজন টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এনএসডিএ এর কারিকুলাম অনুযায়ী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করার কথা থাকলেও টাঙ্গাইল মডেল টিটিসিতে দেখা যায় এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন ট্রেডেই পিপিই ব্যবহার করা হয় না অথচ প্রতিটি শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের নির্ধারিত বাজেট রয়েছে। এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসা বিভিন্ন ট্রেডের প্রশিক্ষনার্থীর জন্য সরকার সিএস, সিবিএলএম, ট্রেড সংশ্লিষ্ট পিপিই, ব্যবহার্য কাঁচামাল, ইন্ডাসট্রিয়াল ভিজিট কস্ট, দৈনিক যাতায়াত ভাতা এবং মাসিক বৃত্তি ছাড়াও আরও বহুবিধ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে থাকলেও শিক্ষার্থীরা এসবের তেমন কিছুই পায় না।
আমরা একাধিক ট্রেডে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে পাই কোন ট্রেডেই সিএস, সিবিএলএম দেয়া হয় না, অথচ এটাই তাদের প্রশিক্ষনের জন্য নির্ধারিত মূল বই, যার বাজেট বাবদ বছরে অসৎ কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা। পিপিই পরিধান না করে প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ফলে তারা পিপিইর গুরুত্বই জানেন না। মানহীন প্রশিক্ষক দিয়ে একাধিক ট্রেড পরিচালনার নামে এখানে হরিলুট হচ্ছে।
অটোমোটিভ মেকানিক্স ট্রেডের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেডে গতকাল পিপিই না পরিধান করে বিকেলের শিফটের প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে ব্যাটারি থেকে ইলেকট্রিক শক্তি উৎপাদন করে কিভাবে স্পার্ক হয়, সেটা প্রশিক্ষক দেখানোর এক পর্যায়ে, প্রশিক্ষকের অদক্ষতায় পাশে থাকা অকটেন থেকে আগুন লেগে যায়। দায়িত্বশীল শিক্ষকগণ আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে আগুনের দিকে পেট্রোলের গ্যালন ছুঁড়ে মারে, যে কারনে দ্রুত আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। পেট্রোল কয়েকজন শিক্ষার্থীর শরীরে গিয়ে লাগলে তাদের শরীরেও আগুন লেগে যায়।
এমতাবস্থায় পাশের ট্রেড থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ছুটে এসে, অন্য ট্রেড থেকে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র এনে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন এবং শিক্ষার্থীরা আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে যান। সংবাদদাতা উক্ত ঘটনা জানার পরে টিটিসি, টাঙ্গাইলে গিয়ে দুর্ঘটনার কারন বিষয়ে অনুসন্ধান করলে অসংখ্য দুর্নীতির চিত্র বের হয়ে আসে। তারা কেন বা কোন বিধান বলে পিপিই বা সেফটি সরঞ্জাম ছাড়া প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন, কর্তৃপক্ষ তার কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। অটোমোটিভ মেকানিক্স এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেডে ফায়ার ডিস্টিংগুয়েশার বা অগ্নীনির্বাপক যন্ত্র কেন নেই? তারা সেটাও বলতে পারেন নি। সংবাদদাতা খোঁজ নিয়ে জানেতে পারেন, সংশ্লিষ্ট ট্রেড ইনচার্জ মিজানুর রহমান উপস্থিত থাকা স্বত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য তিনি বারবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে বলেন। এমন সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের একজন এর প্রতিবাদও করে বলেন, শিক্ষকরা কেন সাথে যাচ্ছেন না?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন “আহত শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষক রয়েছেন।”হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে সংবাদদাতা টাঙ্গাইল টিটিসির কোন দায়িত্বশীলকে খোঁজে পাননি। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় বাসাইলের আবিদকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছে। অপরদিকে পিরোজপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিতে আসা একজন আহত শিক্ষার্থীর সাথে কোন আত্নীয় স্বজন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি না থাকায় সে হাসপাতালের বেডে অসহায় অবস্থায় পরে আছে।
আহতদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে টাঙ্গাইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধানেই আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা চলছে। তাদের আর্থিক সহযোগিতাও দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি ঘটনাটিকে একটি দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করে আর কিছু বলতে রাজী হন নি।











