অলক কুমার : মাদ্রাসা ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় পাঁচ যুবকের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় এই রায় দেন তিনি।
একই সঙ্গে দণ্ডিত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডও করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামের নবম শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে অপহরণের পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে পাঁচ যুবককেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য –
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌশুলী (পিপি) একেএম নাছিমুল আক্তার নাছিম জানান, এই মামলার রায়ে আমি খুশি। আমি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০৩ সনে সংশোধিত ৯(৩) ধারায় মতে, একাধিক ব্যক্তি দ্বারা যদি কোন নারী ও শিশু ধর্ষিত হয় এবং তার ফলে যদি তার মৃত্যু অথবা সে যদি আহত হয় অথবা তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয় তাহলে সংঘবদ্ধ ব্যক্তিগণ মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
এছাড়াও প্রত্যেকের সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা জরিমানা হইবে।
তৎসহ ৩০ ধারায় উল্লেখিত মামলায় সহযোগী আসামীরাও একই দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
তিনি আরো বলেন, আমি যতদিন এই পদে থাকব, ততদিন সাধারণ নির্যাতিতের জন্য কাজ করে যাব।
আসামী পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য –
আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা মিয়া রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান, রায়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
ন্যায় বিচার পেতে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষের বক্তব্য –
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আতাউর রহমান আজাদ জানান, ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মামলার বাদীকে সংস্থার পক্ষ থেকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। নির্যাতিত ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবী জানান তিনি।
এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসিসহ ১১ দফা দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট করা কলেজ ছাত্রী ফাতেমা রহমান বিথীসহ পালনকারী শিক্ষার্থীরা।
কলেজ ছাত্রী ফাতেমা রহমান বিথীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১১ দফা দাবিতে ১০ দিন যাবত টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন।
এবিষয়ে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়।
এই রায়ের মাধ্যমে ধর্ষকদের মাঝে একটি বার্তা পৌঁছে যাবে যে, এই দেশে ধর্ষণ করে আর পার পাওয়া যাবে না।
এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবী জানান সাংবাদিক জাফর আহমেদ।
এই রায়ে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর পরিবার ও এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এসময় তারা দ্রুত মামলার রায় কার্যকরের দাবী জানান।
অন্যদিকে, মধুপুরের চারালজানি ও গোলাবাড়ি গ্রামের শীল ও ঋষি পরিবারের পাঁচ যুবকের মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।